ধমক খেয়ে গরু-জাগরণে সক্রিয় শাসক নেতারা

গত ১০ অক্টোবর ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন দলের জনপ্রতিনিধিরা মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ। তাই ঝাড়গ্রাম জেলায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৫
Share:

পরব: আদিবাসী প্রথায় গরু-খুঁটান। ফাইল চিত্র

জনসংযোগ বড় বালাই! তাও আবার নেত্রীর ধমকে!

Advertisement

বৃহস্পতিবার অমাবস্যার রাতে শুরু হচ্ছে ঝাড়গ্রামের মূলবাসীদের বাঁদনা পরব। তিন দিনের এই পরবকে কেন্দ্র করে এ বার নানা ভাবে এলাকাবাসীর মন পাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে শাসক দল। মন্ত্রী থেকে পঞ্চায়েত প্রতিনিধি সকলের ডায়েরির পাতা ভরেছে গুচ্ছ কর্মসূচিতে। কে, কোন গ্রামে যাবেন, ঠিক সময়ে সব অনুষ্ঠানে পৌঁছনো যাবে কিনা তা নিয়ে সবারই কপালে চিন্তার ভাঁজ।

গত ১০ অক্টোবর ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন দলের জনপ্রতিনিধিরা মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ। তাই ঝাড়গ্রাম জেলায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোকে ধমক দিয়ে তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা। পশ্চিমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতিকে ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দায়িত্ব দেন নেত্রী। তারপর নতুন করে জনসংযোগে মন দিয়েছেন মন্ত্রীমশাই। তাই এ সপ্তাহের শুরুতেই গিধনিতে এক মেলায় ঝুমুর গেয়েছেন তিনি।

Advertisement

বুধবার নয়াগ্রামে দলীয় বৈঠক ডেকে অজিতবাবু আবার ঝাড়গ্রাম জেলার নেতা-জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দিয়েছেন, বাঁদনা পরবকে হাতিয়ার করে নিবিড় জনসংযোগে যেতে হবে। ‘বাঁদনা-পরব’ হল নবান্নের আগে গরুগাভীদের বন্দনা করে কৃতজ্ঞতা জানানোর রীতি। কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাত থেকে শুরু হওয়া বাঁদনা পরব শেষ হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন। কালীপুজোর রাতে গান শুনিয়ে গরুর সেবা করা হয়।

মূলবাসীদের বিশ্বাস, কালীপুজোর রাতে মর্ত্যলোকের প্রতিটি গোয়াল পরিদর্শনে আসেন স্বয়ং মহাদেব। তাই নোংরা ঝেঁটিয়ে, ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে গোয়ালঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়। মাটি লেপে গোয়াল ও বাড়ি রং করা হয়। প্রতিপদের দিন হয় গোয়াল পুজো। আর ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন পরবের অন্তিম পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘গরু খুঁটান’। শালবল্লায় বেঁধে রাখা বলদ বা এঁড়ে গরুদের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় মৃত মোষের চামড়া। বলদ বা এঁড়ে গরুগুলো যখন ওই চামড়া গোঁতাতে যায়, বেজে ওঠে ঢাক, মাদল।

এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে চাষের কাজ ভাল হয়েছে। তবে চাষিদের মনে আনন্দ নেই। ঝাড়গ্রাম জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় হাতির পালের হানায় প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হাতি তাড়াতে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে বন দফতরের বিরুদ্ধে। ফলে জনসংযোগে গিয়ে মানুষের ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়ারও চেষ্টা করছেন জনপ্রতিনিধিরা।

মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো আবার নিজে বাঁদনা পরবের ‘লায়া’ (পুরোহিত)। তাঁর গ্রাম ঝাড়গ্রামের আমলাচটিতে অন্যান্যবার পরবের দিনগুলোতে ব্যস্ত থাকেন চূড়ামণিবাবু। এ বার অবশ্য নিজের গ্রামের পাশাপাশি, অন্য এলাকাতেও একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তিনি। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘শুধু পরবের তিনটে দিন বলে নয়, তার পরেও বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাব।’’ সাঁকরাইল ব্লকে দুঃস্থদের বস্ত্রদান কর্মসূচিতেও যোগ দেবেন তিনি।

ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শুভ্রা মাহাতোর শ্বশুরবাড়ি ঝাড়গ্রামের বাঁধগোড়া অঞ্চলের দামোদরপুর গ্রামে। শুভ্রাদেবী স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরে থাকেন। পরবের দিনে গ্রামের বাড়িতে সপরিবারে যাচ্ছেন তিনি। শুভ্রাদেবীর কথায়, ‘‘পার্বণে অনেক মানুষকে একসঙ্গে পাওয়া যায়। উন্নয়নের কথা তাঁদের জানাতে হবে।’’

নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘অন্য বছর গরু খোঁটানোর একটি অনুষ্ঠানে যাই। এ বার নেত্রীর নির্দেশে বৃহস্পতিবার গরু জাগরণের রাত থেকে এলাকার গ্রামে-গ্রামে ঘুরব। মানুষের সঙ্গে থাকব।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘মূলবাসীদের পার্বণে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন