বিস্মৃতিতে তলিয়েই গিয়েছিল স্বপ্নটা। মৃতপ্রায় সেই স্বপ্ন ফের লোকসভা বিধানসভা নির্বাচনের আগে উস্কে দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু সেটাই যে বিধানসভা নির্বাচনে কাঁটা হয়ে যাবে ভাবতে পারেননি শাসকদলের নেতারা।
ঘাটালের মানুষের কাছে ফি বছর বন্যা খুবই চেনা ছবি। তার জন্য বহু বছর ধরে পরিকল্পনাও চলছে মাস্টার প্ল্যানের। কিন্তু ভোট আসে, ভোট যায়। আর এই প্ল্যানকে কুমিরছানার মতো দেখিয়ে ভোটভিক্ষা করেন প্রতিটি দলের প্রার্থী। বাম আমলে মাস্টার প্ল্যানে কোনও কাজ হয়নি বলে জিগির তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু ক্ষমতায় এসেও এই প্ল্যানের তেমন কোনও অগ্রগতি করতে পারেনি তৃণমূলও। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্ল্যানই গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর দোলইয়ের কাছে।এই প্রসঙ্গ উঠতেই সাফাই দেন শঙ্করবাবু, ‘‘সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, তিন নম্বর চাতালে উড়ালপুল, সরকারি নার্সিং কলেজের কাজও শুরু হয়েছে তো!’’ কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, এই সব কাজে পরিকাঠামোর উন্নতি হলেও পরিষেবার উন্নতি হয়নি।
এখানেই শেষ নয়। দলের কোন্দলও বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর দোলইয়ের বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরাবরই বিরোধী বলে পরিচিত দলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি অজিত দে শঙ্করবাবুর হয়ে প্রচারে নামার কথা ঘোষণা করেছেন বটে, কিন্তু বাস্তব ছবিটা অন্যরকম। অজিতবাবু অনুগামী বলে পরিচিত তন্ময় দোলই এ বার শাসক প্রার্থী বিরুদ্ধে গোঁজ প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দিতায় নেমেছেন। রাজনৈতিক পযবের্ক্ষকদের মতে, তন্ময় দোলই যত ভোটই পান না কেন-তার সিংহভাগ ভোটই শাসক দলের তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই গত পাঁচ বছরে বিধানসভা এলাকায় বহু ক্লাবকে অনুদান পাইয়ে দিয়েও কপালে ভাঁজ কমছে না শঙ্কর দোলইয়ের।
আর এই সুযোগকে হাতিয়ার করেই কোমর বেঁধে আসরে নেমেছে সিপিএমের জোট প্রার্থী কমল দোলই। কেননা, অঙ্ক বলছে শাসক দলের ভোট ভাগাভাগি হলেই আখেরে লাভ জোট প্রার্থীর। এ বার ঘাটাল বিধানসভায় মোট পাঁচজন প্রার্থী। তৃণমূল, সিপিএম-কংগ্রেস জোট, বিজেপি, নির্দল এবং এসইউসি। এলাকায় বিজেপির সংগঠন অনেকটাই নড়বড়ে। কোন্দলেও জেরবার বিজেপি। ফলে লড়াইটা হবে জোট প্রার্থীর সঙ্গে শঙ্কর দোলইয়ের। নির্দল প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতায় না নামলে হয়তো শঙ্কর বাবুকে এতটা চাপে থাকতে হত না বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ।
কারণ? অঙ্কের হিসাবে তৃণমূল এগিয়েই। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন শঙ্কর দোলই। ওইবার ৫২.২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল ।বামেরা পেয়েছিল ৪৩.৮৫ শতাংশ ভোট। বিজেপির দখলে ছিল ২.৩৬ শতাংশ ভোট। গতবারে শঙ্করবাবু ১৬ হাজারের বেশি ভোটে বাম প্রার্থী ছবি পাখিরাকে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অধীন ঘাটাল বিধানসভা ভিত্তিক ফলের পরিসংখ্যান বলছে, তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী(দেব) পেয়েছিলেন ১লক্ষ ৯ হাজার ২৯৮টি ভোট। সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণা পেয়েছিলেন ৫৮ হাজার ৮৭১টি ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া পেয়েছিলেন ৯হাজার ৪১৪টি ভোট। আর লোকসভা ভোটে মোদী হাওয়ায় বিজেপি একলপ্তে অনেকটাই এগিয়ে যায়। শতাংশের হিসাবে তৃণমূলের দখলে ছিল ৫৫.৪১ শতাংশ আর বামেদের ২৯.৮৪ শতাংশ।
তবে এত সব সমীকরণ নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ শঙ্করবাবু। বলেন, ‘‘এ বার আমি গতবারের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বেশি ভোটে জিতব। আমাকে ডাকলেই মানুষের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছি। দলের কোন্দল সংবাদমাধ্যমের তৈরি।” জোট প্রার্থী কমল দোলই বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পর যে শঙ্করবাবুর টাকার পাহাড় হয়েছে, সে কথা তো সকলেই জানেন। এমন মানুষকে আর কেউ জেতাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’’ এত কিছুর মাঝে বাঁকা হেসে গোঁজ প্রার্থী তন্ময়ের টিপ্পনি, ‘‘মানুষ আমাকে চান, তা লোকের সঙ্গে কথা বলেই বুঝেছি। শঙ্করদা ভয় পেয়েছেন কি না জানি না। তবে শুনেছি, এমন গরমে দিন-রাত এক করে বাইক চেপে ছুটোছুটি করছেন! কেন কে জানে!’’
এই কেনর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে লাখ টাকার উত্তরও।