টাকা ফেরত চেয়ে চড়াও, নজর ক্যামেরায় সুরক্ষা সন্ধান

শাসক দলের অনেকেই বলছেন, কাটমানি বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর মেদিনীপুরে বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের অবস্থা এখন এমনই।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০০:১২
Share:

১৪ নম্বর ওয়ার্ড অফিসে সিসি ক্যামেরা। নিজস্ব চিত্র

সদাই মরে ত্রাসে। এই বুঝি কেউ আসে।

Advertisement

শাসক দলের অনেকেই বলছেন, কাটমানি বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর মেদিনীপুরে বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের অবস্থা এখন এমনই।

এক বিদায়ী কাউন্সিলরের স্বীকারোক্তি, ‘‘এই তো সেদিন, মাঝরাতে বাড়ির দোরগোড়ায় নি:শব্দে কয়েকটা মোটরবাইক এসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। হেডলাইটের আলোগুলো দপ দপ করে নিভে গিয়েছিল। কারা যেন ফিসফিসিয়ে কথা বলছিল। ভাল ঠাহর হল না! কী জানি কী হয়। ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছিলাম!’’ কয়েক দিন আগে পর্যন্ত যাঁরা এলাকায় ‘ছড়ি’ ঘুরিয়েছেন, এখন তাঁদের উপরই কেউ বা কারা ‘ছড়ি’ ঘোরাচ্ছেন।

Advertisement

আতঙ্ক প্রতি মুহূর্তে। নিজেদের মতো করে একটা উপায় বার করেছেন কাউন্সিলরদের অনেকে। মেদিনীপুরের এক বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর বলছিলেন, ‘‘আর ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না! এ বার বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে নেওয়াই ভাল!’’ তাঁর কথায়, ‘‘যা চলছে তাতে আমার বাড়ির সামনেও যে কোনও দিন বিক্ষোভ- ঘেরাও হতে পারে। একটা সিসি ক্যামেরা থাকলেও অনেক সুবিধে। একটা সিসি ক্যামেরা একশোজন নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে!’’

কার কার বাড়িতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে? দলেরই এক সূত্রে খবর, শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর অনিলচন্দ্র দলবেরার বাড়িতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। একটা নয়, একাধিক। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বিদায়ী পুর- পারিষদ (পূর্ত) অনিলের বাড়িতে ক্যামেরা রয়েছে না কি ছ’টি! ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর বিশ্বেশ্বর নায়েকের ওয়ার্ড কার্যালয়ও সিসি ক্যামেরায় মোড়া রয়েছে। তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডবের বাড়িতেও সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ওই নেতা- কাউন্সিলরদের অবশ্য দাবি, সিসি ক্যামেরা তাঁরা আগেই বসিয়েছেন। বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘বাড়ির সামনে দোকান রয়েছে। তাই আগেই ক্যামেরা বসিয়েছি।’’ বিশ্বেশ্বর বলছেন, ‘‘ওয়ার্ড কার্যালয়ে ক্যামেরা আগেই বসিয়েছি।’’

শহরে একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলরের নামে ইতিমধ্যে কাটমানি ফেরত চেয়ে ফ্লেক্স- ফেস্টুন পড়েছে। শুরুটা হয়েছিল ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। পরে এর ছোঁয়া লেগেছে ২, ৫, ১৪,২৩ নম্বর ওয়ার্ডেও। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর রোকাইয়া খাতুনের বাড়ির সামনে কাটমানি ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সরকারি বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তারা। এই বিক্ষোভের পরের দিনই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী নির্দল কাউন্সিলর বিশ্বেশ্বর আবার আগাম ঘোষণা করে বসেন, ‘‘আমি কোনও উপভোক্তার কাছ থেকে এক টাকাও নিইনি। ওয়ার্ডের কারও সঙ্গে কোনও রকম টাকাপয়সার লেনদেন করিনি!’’ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর মৌ রায়ের কাছেও কাটমানি ফেরত চেয়ে ফোন এসেছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডেও শোরগোল হয়েছে। পোস্টার, পাল্টা পোস্টার পড়েছে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভারতী রাণা নামে এক বাসিন্দা আবার দাবি করেন, ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর জিতেন্দ্রনাথ দাসের দুই অনুগামী সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সম্প্রতি ওই দু’জন বাড়ি বয়ে এসে তাঁকে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন। জিতেন্দ্রনাথের অবশ্য দাবি, ‘‘কে টাকা দিয়েছিল, কে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে, আমি কিছুই জানি না!’’

এই পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে সিসি ক্যামেরা বসানোর তোড়জোড়। তৃণমূলের এক বিদায়ী কাউন্সিলর বলছিলেন, ‘‘আমার কাছে হিসেব বহির্ভূত টাকা নেই। আর বাড়িতে ক্যামেরা বসিয়েছি সার্বিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা, নজরদারির বিষয়টি মাথায় রেখেই।’’ বুক বাজিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘পুরো বাড়িই ক্যামেরার নজরদারির আওতায় এনেছি। এতে অন্যায়ের কি আছে!’’ তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘কাটমানির বিষয়টি নিয়ে অযথা জলঘোলা হচ্ছে। এ সব বিজেপির ষড়যন্ত্র। তবে এতে দলের ভাবমূর্তি এতটুকুও নষ্ট হবে না।’’

বিজেপির জেলা সম্পাদক অরূপ দাসের কটাক্ষ, ‘‘ক্যামেরার নজরদারির থেকে মানুষের নজরদারি অনেক বড়! সময় এসেছে। যারা কাটমানি নিয়েছেন, এ বার ফেরত দিন।’’

কাটমানি বিক্ষোভ চলছে। এরই মধ্যে নজর ক্যামেরায় কবচ কুণ্ডল খুঁজে পাচ্ছেন কাউন্সিলরদের কেউ কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন