খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকায় চলছে টোটো। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
অটো-টোটো সঙ্ঘাতে তিন দিন বন্ধ থাকার পরে ফের খড়্গপুরে চালু হল টোটো। শনিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টোটোর দেখা মিলেছে।
গত বুধবার গোলমালের পরে বৃহস্পতিবার থানায় দু’পক্ষের মীমাংসা বৈঠকের পরে অটো ধর্মঘট উঠে গিয়েছিল। কিন্তু রুট বিভাজন নিয়ে জটিলতা দেখা যাওয়ায় টোটো চলেনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় খরিদায় শহর তৃণমূল কার্যালয়ে টোটো চালকদের নিয়ে বৈঠকে জট কাটে। সেখানেই কোন টোটো কোন রুটে চলবে তা নির্ধারন হওয়ার পরেই এ দিন সকাল থেকে শহরে টোটো চলেছে। যদিও আগে ৮টি রুটের কথা বলা হলেও আপাতত ৫টি রুটে টোটো চলবে বলে জানা গিয়েছে। এক্ষেত্রে মালঞ্চ, সুভাষপল্লি ও গিরিময়দান থেকে মহকুমাশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত তিনটি রুট করা হয়েছে। এছাড়া নিমপুরা থেকে বোগদা ও মহকুমা হাসপাতাল থেকে বোগদা হয়ে ইন্দা পর্যন্ত আরও দু’টি রুট করা হয়েছে। শনিবার টোটোর অস্থায়ী সংগঠনের নেতা তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “টোটো চালকদের সম্মতিক্রমে রুট ভাগ হয়েছে। আপাতত ৫টি রুট হলেও পরে বাড়ানো হবে। যতদিন আরটিও রুট পারমিট না দেবে ততদিন এভাবেই টোটো চলবে। কোন টোটো কোন রুটে চলবে তার তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহরের বাসস্ট্যান্ড ও গোলবাজার এলাকা দিয়ে টোটো চলবে না। ওই এলাকার উপর দিয়ে চলাচল করলেও কোনও টোটো দাঁড়াতে পারবে না বলেও ঠিক হয়। যদিও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কঠিন বলে মনে করছেন একাংশ টোটো চালক। সুভাষপল্লির এক টোটো চালকের কথায়, “পথে যদি অটোর স্ট্যান্ডে কোনও যাত্রী স্বেচ্ছায় টোটোয় উঠতে চান তবে তাঁকে তো তুলতেই হবে।” এ ছাড়াও বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রশাসনিক নিয়ম মেনে টোটো চলছে কি না, তা দেখভাল করবে কে। ফলে ফের অশান্তির় সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।
বর্তমানে শহরে মালঞ্চ, নিমপুরা, গোলবাজার বাসস্ট্যান্ড ও ইন্দা সহজেই অটো ও টোটো দেখা যায়। তবে ঝাপেটাপুর থেকে কৌশল্যা মোড়, পুরাতন বাজার হয়ে স্টেশন পর্যন্ত রুটে অটোর দেখা মেলে না। দিঘাগামী বাসও ঘুরপথে চলে। তাছাড়া স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের তোলার জন্য বাস দাঁড়াতেও চায় না। এই সব এলাকায় টোটো পরিষেবা চালু হলে শহরবাসীর ভোগান্তি কমবে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মত। কৌশল্যা এলাকার বাসিন্দা রেল কর্মী কৃশানু আচার্য বলেন, “আমাদের এই এলাকায় যোগযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। দু’একটি ট্রেকার চললেও অটো দেখা যায় না বললেই চলে। স্টেশনে যাতায়াত করতে রিকশাই একমাত্র ভরসা। অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হয়। এই এলাকায় টোটো চলবে আশা করি সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”
শহরের বলরামপুর থেকে ঝাপেটাপুর আসতেও প্রায়শই হয়রানির শিকার হতে হয় নিত্যযাত্রীদের। কিন্তু ওই পথেই রয়েছে একাধিক স্কুল। তৈরি হচ্ছে মহকুমা আদালতও। আদালত চালু হলে এই এলাকায় জনসমাগম আরও বাড়বে। তাই এই রুটেও টোটো চালু হোক বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি। সুভাষপল্লির বাসিন্দা ব্যবসায়ী পিন্টু সরকারের কথায়, “অটোর দৌরাত্ম্যের জন্য মানুষের কাছে টোটোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। তাই অশান্তিও হচ্ছে। কিন্তু দু’পক্ষকেই পেটের ভাত জোগাতে হবে। তাই অটো স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছতে গলিপথে টোটো চললে আমাদের অনেক সুবিধা হবে।”
যদিও স্বল্প দূরত্বে চললে লাভ বেশি হওয়ায় অটোর রুটেই টোটো চলুক বলে মত অধিকাংশ টোটো চালকের। টোটোর অস্থায়ী সংগঠনের নেতা তথা পুরপ্রধান প্রদীপবাবু বলেন, “আমরা যে রুট তৈরি করেছি তাতে এমন অনেক রুট রয়েছে যেখানে অটো চলে না। আরটিও-কে টোটোর রুট পারমিট দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছি। টোটো চালকদের কাছে গলিপথেও টোটো চালানোর প্রস্তাব রাখব।’’
যদিও জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) অনিমেষ সিংহরায় বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী যে সমস্ত এলাকায় অটো পরিষেবা নেই সেখানেই টোটো চলবে। টোটোর বিমাও করাতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক মাস পরে বোর্ডের বৈঠকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খড়্গপুরে টোটোর রুট পারমিট দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।”