ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি গোপীবল্লভপুরের রাস্তায় একটি মোটরবাইক উল্টে গিয়ে গুরুতর জখম হন দুই পুলিশ কর্মী। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল এবং লাগোয়া ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভবনে ট্রমা কেয়ার ইউনিট নেই। নেই নিউরো সার্জারি ইউনিটও। ফলে, সেদিন ওই দুই যুবককে প্রাথমিক চিকিৎসা করার পরে এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। এসএসকেএমে ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন পরে এক জনের মৃত্যু হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আর এক পুলিশ কর্মী।
ঝাড়গ্রামের বেশ কিছুটা এলাকা দিয়ে গিয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক মুম্বই রোড। এ ছাড়া ঝাড়গ্রাম মহকুমা দিয়ে গিয়েছে বাঁকুড়া ও ওড়িশাগামী গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাজ্য সড়কও। ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহলে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখমদের ভরসা সেই ১৭৫ কিলোমিটার দূরে কলকাতার সরকারি বা বেসরকরি হাসপাতাল। কারণ, খড়্গপুরে ট্রমা ইউনিট থাকলেও সেটি চালু হয়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও গুরুতর আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা করার মতো ব্যবস্থা নেই। সে জন্য, ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সরাসরি রোগীদের কলকাতায় রেফার করে দিয়ে দায়িত্ব সারেন। ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলা সূত্রের খবর, প্রতি মাসে দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত গড়ে ৪ থেকে ৫ জনকে কলকাতায় রেফার করতে হয়। কখনও সংখ্যাটা বাড়ে। যদিও স্থানীয় সূত্রের দাবি, রেফারের পরিসংখ্যানটা অনেক বেশি। এলাকাবাসীর বক্তব্য, জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী দরাজহস্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন এমন হচ্ছে?
২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি পৃথক ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলা গঠিত হয়। ওই দিন থেকেই ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালটিকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। গত চার বছরে ধাপে ধাপে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালের লাগোয়া জমিতে গড়ে উঠেছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবন। সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে আউটডোর-সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগ চালু হয়েছে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে মাথায় ও শিরদাঁড়ায় গুরুতর চোট পাওয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ নেই।
বড় দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পাওয়া রোগীদের তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন নিউরো সার্জারি বিভাগ। ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনে নিউরো সার্জারি বিভাগটিই নেই। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিউরো সার্জেনও নেই। হাসপাতালে দু’জন জেনারেল সার্জেন ও দু’জন অর্থোপেডিক সার্জেন অবশ্য আছেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় মাথায় ও শিরদাঁড়ায় গুরুতর চোট লাগলে সেক্ষেত্রে নিউরো সার্জেন ও নিউরো সার্জারির পরিকাঠামো থাকা প্রয়োজন। জঙ্গলমহলের গুরুত্বপূর্ণ এই জেলা হাসপাতালে জেনারেল সার্জেন ও অর্থোপেডিক সার্জেন থাকা সত্ত্বেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্তদের কলকাতায় রেফার করতে হচ্ছে।
একই ছবি জেলার অন্য হাসপাতালগুলিতেও। সেখানেও নিউরো সার্জারি বিভাগ নেই। কয়েকদিন আগে বেলপাহাড়ির তামাজুড়ির কাছে রাজ্যসড়কে বরযাত্রীর গাড়ি উল্টে ৮ জনের মৃত্যু হয়। ট্রমা কেয়ার ইউনিট না থাকায় গুরুতর জখমদের চিকিৎসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লকের পাশাপাশি, পার্শ্ববর্তী বাঁকুড়ার ফুলকুসমা ও রাইপুর এলাকা এবং সীমানাবর্তী পূর্ব সিংভূম ও ওড়িশার বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “আমাদের এখানে স্নায়ু-সংক্রান্ত জটিল অস্ত্রোপচার করার পরিকাঠামো নেই। সেই জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক রোগীদের কলকাতায় রেফার করতে হয়।” রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, “নিউরো সার্জেন-সহ বিশেষ কিছু বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের সংখ্যাটা অপ্রতুল। তাই জেলার হাসপাতালে এ ধরনের বিভাগ চালু করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু করার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের সমস্যাটাই বড় কারণ।”
জঙ্গলমহলের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী কল্পতরু। ফলে, আশা করতেই পারেন এলাকাবাসী!