রাস্তার ‘খরচ’ তুলতে জেনে বুঝে বিধিভঙ্গ

রাস্তা খারাপ হয়। বাড়ে দুর্ঘটনা। ওভারলোডিংয়ের জেরে এমন সমস্যা থাকলেও তা আটকাতে পুলিশ-প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ রয়ে‌ছে আইন ভেঙে পুলিশের সহায়তায় পার পেয়ে যাওয়ারও। জেলায় জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলিতে পরিস্থিতি ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।রাস্তা খারাপ হয়। বাড়ে দুর্ঘটনা। ওভারলোডিংয়ের জেরে এমন সমস্যা থাকলেও তা আটকাতে পুলিশ-প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ রয়ে‌ছে আইন ভেঙে পুলিশের সহায়তায় পার পেয়ে যাওয়ারও। জেলায় জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলিতে পরিস্থিতি ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

Advertisement

কেশব মান্না

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০০:২৪
Share:

ওয়েব্রিজে অপেক্ষায় মালবোঝাই লরি। নিজস্ব চিত্র

ঝুঁকি আছে জেনেও অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যেতে হয়। হলদিয়ায় একটি পার্কিং টার্মিনাসে বসে এক লরিচালক বোঝাচ্ছিলেন কতটা ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের হলদিয়া থেকে পণ্য নিয়ে আসানসোল কিংবা অন্য কোনও গন্তব্যে যেতে হয়। ঝুঁকির কারণ, লরি মালিকদের চাপ। মালিকের লাভের কড়ি ঠিক রাখতে ওভারলোডিং করেই পণ্য নিয়ে যেতে বাধ্য হন তাঁরা।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লরি চালকের বক্তব্য, হলদিয়ায় একাধিক ওয়েব্রিজ রয়েছে যেখানে লরিতে ওভারলোডিং আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। তবে ওই ওয়েব্রিজগুলিতে পুলিশের কোনও নজরদারি থাকে না। ফলে সেখানেও কারচুপির সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া, এমন ঘটনাও ঘটছে, যেখানে ওয়েব্রিজে সঠিক ওজনের পণ্য পরিবহণের ছাড়পত্র পাওয়ার পর সেখান থেকে বেরিয়ে ফের সেই লরিতে আরও পণ্যবোঝাই করা হয়। ফলে ধরার কোনও উপায় থাকে না। কারণ এ ক্ষেত্রেও পুলিশের নজরদারির অভাব।

কাটমানি ইস্যু নিয়ে যখন রাজ্য জুড়ে তোলপাড় চলছে সেই সময় ওভারলোডিংয়ে নিয়ে খোদ পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধেই তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছেন লরি চালকেরা। ওভারলোডিংয়ের জেরে রাস্তার হাল খারাপ থেকে দুর্ঘটনার জন্য তাঁদেরকেই দায়ী করা হলেও লরি চালকদের অনেকেরই অভিযোগ, তাঁদের এ ক্ষেত্রে কিছুই করার থাকে না। কারণ পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে আগে থেকেই বন্দোবস্ত করা থাকে লরি-ট্রাক মালিকদের।

Advertisement

হলদিয়ার দুর্গাপুরে পণ্য খালাস করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন শেখ মুস্তাক। দশ চাকা লরির চালক মুস্তাকের কথায়, ‘‘হলদিয়া থেকে নন্দকুমার পর্যন্ত তিনটি থানা। প্রতিটি থানাকে ‘তোলা’ দিলে তবেই বেরোনোর ছাড়পত্র মেলে। এর পর বাকি রাস্তায় তো রয়েইছে।’’

তোলাবাজির জন্যই কি বাড়তি পণ্য নিয়ে সেই খরচ মেটানোর ব্যবস্থা হয়?

এক লরি মালিকের দাবি, ‘‘সমস্ত কাগজপত্র ঠিক থাকলেও অনেক সময়েই পুলিশের ‘হুজ্জুতি’ পোহাতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে ওভারলোডিং করেন। পুলিশের সঠিক নজরদারি ও অন্যায় তোলাবাজি বন্ধ হলে ওভারলোডিংও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’’

দিঘা থেকে প্রতিদিন মাছের লরি নিয়ে হাওড়ায় আসেন এমনই এক লরিচালকের বক্তব্য, ‘‘রাস্তায় নির্দিষ্ট দূরত্বে ওয়েব্রিজ থাকা জরুরি। সে ক্ষেত্রে একটি ওয়েব্রিজে কোনও লরি ওজনের পর সেটি পথে যাতে আর কোনওভাবে ওভারলোডিং করতে না পারে সে জন্য ফের পরবর্তী ওয়েব্রিজে ওজনের ব্যবস্থা করা হোক। ওয়েব্রিজগুলির সঙ্গে পুলিশেরও সমন্বয় থাকা জরুরি। তা হলে ওভারলোডিং বন্ধ করার ক্ষেত্রে তা অনেক সহায়ক হবে।’’

যদিও এক লরি মালিকের যুক্তি, ‘‘জ্বালানির দাম যে ভাবে বাড়ছে সেই অনুপাতে ভাড়া মেলে না। তার উপর পুলিশের ঝামেলা রয়েছে। পুরো রাস্তার ‘খরচ’ তুলতে হবে তো! সব মিটিয়ে লাভ রাখতে বাধ্য হয়েই ওভারলোডিং করতে হয়।’’

এ ব্যাপারে ডিস্ট্রিক্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলামের দাবি, ‘‘জাতীয় সড়ক কিংবা রাজ্য সড়কে অধিকাংশ সময় ওভারলোডিং নিয়ে নজরদারি চলে। যার জন্য ইদানীং জেলায় ওভারলোডিং-এর উপদ্রব অনেক কমেছে।’’ তবে নিয়মিত নজরদারির জন্য পরিবহণ দফতরের যত কর্মী থাকা দরকার তা থাকে না বলেই জেলা ট্রাফিক সূত্রে দাবি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) পারিজাত বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় ওয়েব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি যাতে আরও বাড়ানো যায়, তার জন্য অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করা যায় কিনা তা বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। ওয়েব্রিজ গুলিতে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন