হাসপাতালে লড়ছেন স্ত্রী, দুই সন্তান হারিয়ে হাহাকার বাবার

পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দুই যমজ সন্তানের। স্ত্রী আহত অবস্থায় ভর্তি মেডিক্যাল কলেজে। মুহূর্তেই ওলটপালট জীবন। উদভ্রান্তের মতো বারবার দেওয়ালে মাথা ঠুকছিলেন ডেবরার রাধামোহনপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাইকপাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মলয় মান্না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডেবরা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০১:২৮
Share:

ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বিক্ষোভ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দুই যমজ সন্তানের। স্ত্রী আহত অবস্থায় ভর্তি মেডিক্যাল কলেজে। মুহূর্তেই ওলটপালট জীবন। উদভ্রান্তের মতো বারবার দেওয়ালে মাথা ঠুকছিলেন ডেবরার রাধামোহনপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাইকপাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মলয় মান্না। বলছিলেন, ‘‘আমি কী নিয়ে বাঁচব!”

Advertisement

বাড়ির যমজ দুই ছেলে-মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত গোটা পরিবার। মলয়বাবুর দাদা শান্তনু মান্না বলেন, “বাড়িতে দুই ভাই-বোন আমাদের সকলের প্রিয় ছিল। তাছাড়া আমার তিন মেয়ে। বাড়িতে একমাত্র ছেলে ছিল ভাইয়ের ছেলে সুমন। ওদের মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।’’ বিপদের দিনে মলয়বাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। তবে একই সঙ্গে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। সে ক্ষোভ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুরে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে যে জায়গায় দুর্ঘটনা হয়েছে তা অনেকদিন ধরে বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। বারবার বলা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্রীরামপুর বাজারের কাছে সিভিক ভলান্টিয়ার রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করলেও বাকি রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলে যানবাহন। এমনকী, সরকারি আধিকারিকদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে চলাচল করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা যান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।”

মলয় এবং তাঁর স্ত্রী কবিতার যমজ সন্তান। ছেলে সুমন (৮) এবং মেয়ে স্নেহা (৮) দু’জনেই শ্রীরামপুরের কংসাবতী গুচ্ছ সমিতির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া।

Advertisement

এ দিন সাইকেল করে ছেলেমেয়েকে স্কুল নিয়ে যাচ্ছিলেন কবিতা। জাতীয় সড়কে এক দমকল কর্তার গাড়িতে মৃত্যু হয় সুমন এবং স্নেহার। ওই ঘটনার পরই প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ হাজরা বলেন, “সাইকেলে ওঁরা রাস্তার ধারে মোরামের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। পিছন থেকে দমকল আধিকারিকের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোরামে নেমে গিয়ে ধাক্কা মেরেছে। তাতেই এমন দুর্ঘটনা। অথচ দমকলের আধিকারিকের গাড়িটি দাঁড়ায়নি।’’

জাতীয় সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী। তিনি বলেন, “জেলায় নতুন পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা অন্য থানার সঙ্গে ডেবরা থানাতেও ট্রাফিক ব্যবস্থা মজবুত করেছি। এ বার শ্রীরামপুরের ওই এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণে নিশ্চয় পদক্ষেপ করব।’’ পুলিশের আশ্বাসের পর জাতীয় সড়ক থেকে অবরোধ উঠে যায়। তবে অবরোধ শুরু হয় ডেবরা হাসপাতালে। হাসপাতালের দরজার কাচ ভাঙে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ডেবরার বিধায়ক সেলিমা খাতুন বলেন, “হাসপাতালে ভাঙচুরে মৃতদের বাড়ির কেউ জড়িত নয়। স্থানীয় কিছু মানুষ এসে এই কাণ্ড করেছে।”

যে গাড়ির ধাক্কায় যমজ ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ডিভিশনাল অফিসার দীপঙ্কর পাঠক (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন তিনি)। তাঁর দাবি, দুর্ঘটনার পর গাড়ি নিয়ে সোজা ডেবরা থানায় গিয়েছিলেন তিনি। সুমন, স্নেহার জেঠুর প্রশ্ন, ‘‘শুধু ভাবছি, সরকারি গাড়ি বলে কী এভাবে ছোট্ট দু’টি প্রাণ কেড়ে নেওয়া যায়!” যমজ সন্তানকে হারিয়ে এস এস কে এম হাসপাতালে লড়ছেন মা। তাঁর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন