এই গর্তেই পড়ে মারা যায় দুই বালক। ইনসেটে শেখ আনাজ। নিজস্ব চিত্র
দিন কুড়ি আগে পুরসভার জলের পাইপের জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছিল। প্রায় সাত ফুটের গর্ত তারপর আর বোজানো হয়নি। জলে ভর্তি সেই গর্তে পড়েই শনিবার অকালে ঝরে গেল দু’টি কচি প্রাণ। খড়্গপুর শহর লাগোয়া ঝরিয়া এলাকার এই ঘটনায় মৃত রোহন মণ্ডল ও শেখ আনাজ দু’জনেরই বয়স সাত বছর।
ক’দিন আগে কলকাতার বাঁশদ্রোণীতে নির্মীয়মাণ আবাসনের জলের ট্যাঙ্কে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই খুদের। প্রশ্ন উঠেছিল নির্মীয়মাণ বহুতলের নিরাপত্তা নিয়ে। খড়্গপুরের ঘটনায় অবশ্য কাঠগড়ায় পুরসভা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিন সাতেক আগে ঝরিয়া এলাকার ওই গর্তেই পড়ে গিয়েছিল একটি গরু। এলাকাবাসী বহু চেষ্টা করে টেনে তুলে প্রাণে বাঁচিয়েছিল গরুটিকে। তারপর ওই গর্ত বুজিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছিল। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। তারপরই এ দিনের ঘটনা।
খড়্গপুর গ্রামীণ থানা এলাকায় পড়ে ঝরিয়া। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে গ্রামেরই দুই বালক রোহন ও আনাজ বাড়ির অদূরে খেলা করছিল। স্থানীয়দের অনুমান, খেলতে খেলতে তারা পুরসভার পাম্পিং স্টেশনের কাছে চলে যায়। তারপর অসাবধানে কোনও একজন পড়ে যায় বিশালাকার ওই গর্তে। সম্ভবত তাকে বাঁচাতে গিয়ে অন্যজনও গর্তে পড়ে। বিকেল নাগাদ গর্তের জলে ভেসে ওঠে দুই বালকের দেহ। তারপর এলাকায় শোকের সঙ্গে উস্কে ওঠে ক্ষোভ। স্থানীয় বাসিন্দা সায়দা বিবি, জাভেদা বিবিরা বলছিলেন, “এক মাস হতে চলল গর্ত খুঁড়ে রেখে দিয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে গরু পড়ে যাওয়ার পরে কতবার গর্ত ভরাট করতে বলেছি। কিন্তু কেউ শোনেনি। কচি দু’টো প্রাণ তো ওই গর্তের জন্যই চলে গেল।”
আরও পড়ুন: ঘর জ্বলছে, হঠাৎ সবার খেয়াল হল ঋষি নেই
অদূরে আনাজের বাড়িতেও তখন কান্নার রোল। দুই ভাইয়ের মধ্যে আনাজ ছিল বড়। বাবা শেখ দিলবর কাঠের মিস্ত্রি। মা আসমা বিবি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “পুরসভার খুঁড়ে রাখা গর্তের জন্য অসুবিধা হচ্ছিল। কিন্তু ওই গর্তে পড়েই যে আমার ছেলে মারা যাবে ভাবিনি।”
পুরসভা জানিয়েছে, খড়্গপুর শহরে দ্বিতীয় জল প্রকল্পের জন্য কেশপাল থেকে ঝরিয়া পাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত পাইপ লাইনের কাজ চলছে। সেই কাজের জন্যই গর্তটি খোঁড়া হয়েছিল। ভাল্ভে সমস্যা হওয়ায় কাজ কিছুটা বাকি ছিল। তাই গর্ত ভরাট করা হয়নি। এ দিন ঘটনার পরে ঝরিয়ায় যান খড়্গপুরের উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফ। বলেন, “কেন গর্ত ছিল, কোন ঠিকাদার কাজ করছিল সব খতিয়ে দেখা হবে।” জল বিষয়ক পুর-পারিষদ তৈমুর আলি খানের দাবি, “গর্ত খোঁড়ার কথা জানতাম না। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলব।” গর্তের কথা জানতেন না বলে দাবি পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারেরও।