দুই ছাত্রের চিঠি পেয়ে ধূমপান ছাড়লেন স্যার

মনোজ মাহাতো ও কৃষ্ণপ্রসাদ টুডু নামে ওই দুই ছাত্রের চিঠি দেখে গোড়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছিলেন শালবনির মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া। বাড়িতে মা-স্ত্রী-মেয়েরাও বারবার এই কথা বলেছেন তাঁকে। কিন্তু কলেজজীবনের নেশা কি এত সহজে ছাড়া যায়!

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২১
Share:

দিশা: প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মনোজ (বাঁ দিকে) ও কৃষ্ণপ্রসাদ। ছবি:কিংশুক আইচ

ধূমপান রোধে সচেতনতা বাড়াতে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতা চলছে স্কুলে স্কুলে। সেখানেই সপ্তম শ্রেণির দুই ছাত্র চিঠি লিখল প্রধান শিক্ষককে। তাদের আর্জি, ‘আশা করি, আপনি ধূমপান করা ছেড়ে দেবেন। নিজেও ধূমপান করবেন না, অন্য কাউকেও করতে দেবেন না।’

Advertisement

মনোজ মাহাতো ও কৃষ্ণপ্রসাদ টুডু নামে ওই দুই ছাত্রের চিঠি দেখে গোড়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছিলেন শালবনির মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া। বাড়িতে মা-স্ত্রী-মেয়েরাও বারবার এই কথা বলেছেন তাঁকে। কিন্তু কলেজজীবনের নেশা কি এত সহজে ছাড়া যায়! ছেলের বয়সী দুই ছাত্রের চিঠি অবশ্য সেই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই প্রসূনবাবু বলছিলেন, ‘‘ছাত্রদের আর্জি ফেলতে পারিনি। ওই চিঠি পাওয়ার পরে আর ধূমপান করছি না।’’

আরও পড়ুন: সচেতনতায় ম্যাজিকও

Advertisement

ধূমপান ঠেকাতে বছরভরই নানা সচেতনতা কর্মসূচি করে স্বাস্থ্য দফতর। তারপরেও ধূমপানে যে রাশ টানা গিয়েছে, তা নয়। বরং, স্কুল পড়ুয়াদের একাংশ প্রকাশ্যেই ধূমপান করে। পরিস্থিতি দেখে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে প্রতিটি ব্লকের একটি স্কুলে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সম্প্রতি শালবনির প্রতিযোগিতাটি হয় মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠে। দু’টি বিভাগে যোগদানকারী শতাধিক পড়ুয়াকে বলা হয়, ধূমপান করেন এমন কাউকে চিঠি লিখতে হবে। সেই মতো কেউ বাবা-কাকা, কেউ আবার শিক্ষক-গৃহশিক্ষককে চিঠি লেখে।

একটি বিভাগে প্রথম হওয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিপাশা প্রামাণিক চিঠি লিখেছিল কাকা ননীগোপাল প্রামাণিককে। বিপাশা লিখেছে, ‘কাকিমার কাছে শুনলাম তুমি ধূমপান করো। শুনেই ভীষণ কষ্ট হয়েছে। কারণ, ধূমপান খুব ক্ষতিকর।’ দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শাবানা খাতুন আবার বন্ধু অভিজিৎ কোলেকে চিঠি লিখে অন্য বিভাগে প্রথম হয়েছে। শাবানা লিখেছে, ‘রোজ এই ধূমপানের পিছনে তুই প্রায় ২০ টাকা খরচ করিস। মাসে প্রায় ৬০০ টাকা আর বছরে ৭,২০০ টাকা। এই টাকায় তুই বই কিনতে পারিস, ভাল খাবার খেতে পারিস, গরিবদের সাহায্য করতে পারিস।’

চিঠির জোরে প্রধান শিক্ষককে ধূমপান ছাড়তে বাধ্য করা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মনোজ ও কৃষ্ণপ্রসাদ অবশ্য প্রতিযোগিতায় স্থান পায়নি। তবে তাতে দু’জনের দুঃখ নেই। তারা বলছিল, “আমাদের চিঠি পড়ে স্যার ধূমপান ছেড়েছেন, এটাই তো সব থেকে বড় পুরস্কার।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও মানছেন, “ছাত্রদের মাধ্যমে সচেতনতা ছড়াতেই এই প্রতিযোগিতা। তাতে যদি একজনও ধূমপান ছাড়ে, সেটাই বা কম কী!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন