জোটের ঠেলা, কটাক্ষ বিরোধীদের

দ্বন্দ্ব মেটাতে কোলাকুলি, মিষ্টিমুখ দুই তৃণমূল নেতার

একজন দলের বিধায়ক অন্যজন দলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য। একই দলের দুই পদাধিকারী দুই প্রবীণ নেতা মুখোমুখি হননি প্রায় দু’বছর ধরে। উল্টে দু’জনেই নিজস্ব অনুগামীদের নিয়ে একে অপরকে পাল্লা দিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করে এসেছেন।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৩
Share:

একজন দলের বিধায়ক অন্যজন দলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য। একই দলের দুই পদাধিকারী দুই প্রবীণ নেতা মুখোমুখি হননি প্রায় দু’বছর ধরে। উল্টে দু’জনেই নিজস্ব অনুগামীদের নিয়ে একে অপরকে পাল্লা দিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করে এসেছেন। আড়ালে আবডালে নয়, প্রকাশ্যে রাজ্যের শাসকদলের দুই নেতার এমন কোন্দলের জেরে কর্মী-সমর্থকরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়েছেন। কিন্তু ভোট বড় বালাই। শিয়রে বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। তাই সমঝোতায় আসতে বাধ্য হলেন শাসকদলের দুই প্রতিপক্ষও। শুধু কথায় নয়, রীতিমতো কোলাকুলি-মিষ্টিমুখ করে!

Advertisement

চণ্ডীপুর বিধানসভার বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক তথা এ বারের প্রার্থী অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য ও দলের চণ্ডীপুর ব্লক সভাপতি অশ্বিনী দাসের মধ্যে এভাবেই বরফ গলল মঙ্গলবার রাতে। সমস্যা মেটাতে হাজির হতে হয়েছিল খোদ সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে চণ্ডীপুর (তৎকালীন নরঘাট) বিধানসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। কিন্তু বামফ্রন্ট প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন। নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলন পর্বের পর ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে ফের তৃণমূল প্রার্থী হন অমিয়কান্তিবাবু। জয়লাভ করে বিধায়ক হন তিনি। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের বিরোধী শিবিরের হিসেবে অমিয়কান্তিবাবুর সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয় দলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ অশ্বিনী দাসের। অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ অশ্বিনীবাবুর সঙ্গে অমিয়কান্তিবাবুর এই গোষ্ঠীকোন্দল একাধিক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে এসেছে।

Advertisement

এ হেন দ্বন্দ্ব বজায় থেকেছে গত ৪ মার্চ বিধানসভার প্রার্থী হিসেবে ফের অমিয়কান্তিবাবুর নাম ঘোষণার পরেও। অমিয়কান্তিবাবুর হয়ে তাঁর অনুগামীরা প্রচার শুরু করলেও দলের ব্লক সভাপতি অশ্বিনীবাবুর অনুগামীরা সেভাবে প্রচারে নামেনি। ইতিমধ্যে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস জোটের সিপিএম প্রার্থী মঙ্গলেন্দু প্রধানের সমর্থনে গত রবিবার চণ্ডীপুরের কালিকাখালি ফুটবল ময়দানে সভা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। হাজির ছিলেন জেলা ও ব্লক কংগ্রেসের নেতা –সমর্থকরাও। একদিকে দলের দুই নেতার কোন্দল অন্য দিকে বাম-কংগ্রেস জোটের আবহাওয়া রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে শাসক দলের নেতাদের।

পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করেন তমলুকের সাংসদ তথা নন্দীগ্রাম বিধানসভার প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দুবাবুর ডাকে চণ্ডীপুর বাজারে সাংসদ কার্যালয়ে অমিয়কান্তিবাবু ও অশ্বিনীবাবু-সহ তাঁদের ঘনিষ্ঠ ৫ জন করে অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক হয়। শুভেন্দুবাবুর উপস্থিতিতে ওই বৈঠকেই দুই নেতার মান-অভিমানের পর্ব মেটানোর চেষ্টা চলে। অবশেষে বরফ গলে। এতদিনের তিক্ততা মিটে যায় মিষ্টিমুখে। সমস্যা যে খানিকটা মিটেছে তা টের পাওয়া গিয়েছে বুধবার সকালেই। চণ্ডীপুর বাজারে দলের ব্লক কার্যালয়ে দলের অঞ্চল, বুথ সভাপতি নিয়ে এক বৈঠকে হাজির ছিলেন অমিয়কান্তি ও অশ্বিনীবাবু দু’জনেই। ওই বৈঠকে দলীয় প্রার্থী অমিয়কান্তিবাবুকে বিপুল ভোটে জেতানোর ডাকও দেন অশ্বিনীবাবু।

তবে কি বাম–কংগ্রেস জোটের ভয়েই দু’জনের এই মিলন? তা কার্যত স্বীকার করে অশ্বিনীবাবু বলেন, ‘‘গত দু’বছর ধরে অমিয়কান্তিবাবুর সঙ্গে আমার ভুল বোঝাবুঝি ছিল। শুভেন্দুবাবুর উদ্যোগে গতকাল বৈঠকে আমাদের সেই ভূল বোঝাবুঝি দূর হয়ে গিয়েছে। বামফ্রন্টকে আমরা একচুলও মাটি ছাড়ব না।’’ আর অমিয়কান্তিবাবু বলেন, ‘‘যেটুকু সমস্যা ছিল তা মিটে গিয়েছে। আমরা একজোট হয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছি।’’

এমন সুযোগে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বাম-কংগ্রেস জোটও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জোট সমর্থকের কথায়, ‘‘এসব জোটের মাহাত্ম্য। না হলে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থেকে একেবারে মিষ্টিমুখ, ভাবাই যায় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন