লাড্ডু তৈরির ব্যস্ততা। মেদিনীপুর শহরের ভীমচকে। ছবি:সৌমেশ্বর মণ্ডল।
বসন্ত শেষের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বৈশাখের আগমনী বার্তা। বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিনটাতে আপামর বাঙালি মেতে ওঠেন আড্ডা, আনন্দ, খাওয়াদাওয়ায়।
এ বারের পয়লা বৈশাখও শহর মেদিনীপুরের কাছে আরও রঙিন হতে চলেছে। থাকছে নানা অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে, পয়লা বৈশাখকে স্মরণীয় করে রাখতে এ বারও প্রস্তুত শহর। ইতিমধ্যে শহরের এদিক-সেদিকে সেই প্রস্তুতির ছবিই চোখে পড়েছে।
ইতিহাস বলে বাংলা নববর্ষ উৎসবের প্রচলন হয়েছিল মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে। তারপর বহু বসন্ত পেরিয়ে অগুন্তি নববর্ষের ভোর ছুঁয়েছে এ শহরকে। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো অনেক কিছুই বদলেছে। বর্ষবরণের জাঁকজমক হয়তো ততটা নেই। তবে সাবেক ছবিটা এখনও বদলায়নি। পয়লা বৈশাখের যে এক নিজস্ব গন্ধ রয়েছে, তা এ শহরের আনাচে-কানাচেও বেশ পাওয়া যায়।
কোথাও কোথাও বর্ষবরণের মঞ্চে থাকে নতুনত্বের ছোঁয়াও। শিশু সংগঠন সব পেয়েছির আসরের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখ দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। সব পেয়েছির আসরের বর্ষবরণের এ বার ৩৮ তম বর্ষ। সকালে বিদ্যাসাগর হলের মাঠ থেকে প্রভাতফেরি বেরোবে। তা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করবে। থাকবে সুসজ্জিত ট্যাবলো। বিকেলে বিদ্যাসাগর হলের মাঠেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। যেখানে ছড়া ব্যায়াম, নৃত্য প্রভৃতি পরিবেশিত হওয়ার কথা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়েই এই অনুষ্ঠান। আসরের উদ্যোগে ইতিমধ্যে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়েছে। সফল প্রতিযোগিদের অনুষ্ঠান মঞ্চেই পুরস্কৃত করা হবে। সব পেয়েছির আসরের মেদিনীপুর অঞ্চল সংগঠক জীতেশ হোড় বলেন, “প্রতি বছরই এই দিনটি উদ্যাপন করা হয়। গত ৩৭ বছরের মতো এ বারও নববর্ষের দিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।”
জাতীয় ক্রীড়া ও শক্তি সঙ্ঘ পশ্চিম মেদিনীপুরের উদ্যোগেও মেদিনীপুরে দিনটি উদ্যাপন হয়। এ বার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। সকালে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সামনে থেকে প্রভাতফেরি বেরোবে। পরে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। মেদিনীপুর ড্যান্সার্স ফোরামের উদ্যোগেও হবে রঙিন অনুষ্ঠান। নাম ‘বৈশাখী’। সকালে মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। থাকবে একক নৃত্য, সমবেত নৃত্য প্রভৃতি।
সেই ’৯১ সাল থেকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করে আসছে ক্যামেলিয়া। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় মেদিনীপুর কলেজের সামনে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির পাদদেশের পাশে ক্যামেলিয়ার উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ বার অবশ্য ভোটের কারণে পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় এই অনুষ্ঠান হবে না। তবে দিন কয়েক পরে হবে। আগে নেতাজী মূর্তির পাদদেশের সামনে একটি ক্যামেলিয়া গাছ ছিল। ওই গাছের নামেই সংস্থার নামকরণ করা হয়। বেশ কয়েক বছর আগে অবশ্য গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেদিনীপুর কলেজে ‘স্ট্রং রুম’ হয়েছে। তাই কলেজের আশপাশে কোনও অনুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন।আই- সোসাইটির উদ্যোগে অনলাইন দৈনিক সাহিত্যপত্র নতুন রূপে পথচলা শুরু করবে। পয়লা বৈশাখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকালে শহরের ফিল্ম সোসাইটির সভাঘরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে, পয়লা বৈশাখের দিন অনেকে পুজো দেন। ব্যবসায়ীরা হালখাতা নিয়ে চলে আসেন। পরে দোকানে দোকানে মিষ্টির প্যাকেট, বাংলা মাসের হিসেব দেওয়ার ক্যালেন্ডার দেওয়া হয়। অনেকে এই দিনে নতুন জামাকাপড়ও পরেন। সব মিলিয়ে, পয়লা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত শহর মেদিনীপুর।