সমতাবেড়ে মদনমোহন মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ

এক সময়ে রূপনারায়ণ বইত পাশ দিয়ে। আশপাশে ছিল আদিগন্ত খোলা জমি। নির্জন গ্রামের সেই মন্দির জমে উঠত বিশেষ বিশেষ পার্বণে। বেশ ক’বছর আগে জীর্ণ মন্দির সংস্কার শুরু হলেও অসম্পূর্ণ থেকে যায় সেই কাজ। সম্প্রতি ‘নবান্ন’র বৈঠকে পরিত্যক্ত মন্দির ফের সংস্কার করার অনুমতি চাইলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা।

Advertisement

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০০:৪২
Share:

সমতাবেড়ের মদনমোহন মন্দির।

এক সময়ে রূপনারায়ণ বইত পাশ দিয়ে। আশপাশে ছিল আদিগন্ত খোলা জমি। নির্জন গ্রামের সেই মন্দির জমে উঠত বিশেষ বিশেষ পার্বণে। বেশ ক’বছর আগে জীর্ণ মন্দির সংস্কার শুরু হলেও অসম্পূর্ণ থেকে যায় সেই কাজ। সম্প্রতি ‘নবান্ন’র বৈঠকে পরিত্যক্ত মন্দির ফের সংস্কার করার অনুমতি চাইলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা।
‘‘শূন্য তোমার অঙ্গনে, জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।’’—‘পূরবী’-র ‘ভাঙা মন্দির’-এ যে ছবি এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ঠিক সেই আদল পানিত্রাস ডাকঘর এবং বাগনান থানার অধীন সমতাবেড়ের মদনমোহন মন্দিরের। ধান খেতের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুটা অপরিসর পথ পেরিয়ে এই মন্দির। থেকে থেকে বৃষ্টি, বিস্তৃত উঠোন তাই কাদামাখা। আশপাশে কিছু কুঁড়ে। কয়েকশো গজ দূরে রূপনারায়ণ। মন্দিরের বিভিন্ন অংশে ফাটল, ভাঙন। পাশের ঝোপঝাড়ের গ্রাস ক্রমেই বাড়ছে গোটা মন্দিরে। দ্বারের উপর ও পাশে টেরাকোটার সুদৃশ্য টালিতে খোদাই ছিল নানা নকশা, সিংহ। সে সব খুলে গিয়েছে। মূল মন্দিরের দরজা বন্ধ। ঠিক সামনে বাঁশের ভারা বাঁধা। তার সামনে কিছু ছাগল, এক-আধটা বাছুর। কাপড় শুকোচ্ছে।
এটি কত প্রাচীন, তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যে যাঁর মতো দাবি করলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেল, ১৬৫১ সালে জমিদার মুকুন্দপ্রসাদ রায়চৌধুরী এটি তৈরি করান। সম্প্রতি ক’বছর আগে সরকারি টাকায় ইটের তৈরি এই বিশাল আটচালা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কিছু দিন বাদেই কাজ ফেলে চলে যান ঠিকাদার। সংস্কার শুরুর আগে প্রতিবেশী শিক্ষক অশোক চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে মদনমোহন, রাধা, নারায়ণ, শিব রাখা হয়। তাঁর স্ত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেটাও বছর আট আগের কথা। অনেককে অনুরোধ করেছি মন্দিরের সংস্কার করে বিগ্রহগুলো রাখার ব্যবস্থা হোক। লাভ হয়নি।’’ তিনি জানান, মন্দির ও বিগ্রহের দেখভালের জন্য জমিদার মুকুন্দপ্রসাদ কিছু শরিককে জমি দিয়ে যান। ওঁরাই বিগ্রহ পুজো করেন।

Advertisement

মুকুন্দপ্রসাদবাবুর অন্যতম শরিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘রোজ ওই বাড়িতে গিয়ে পুজো করি। যে ভাবে সংস্কার হচ্ছিল, তাতে এলাকার লোকেরা আপত্তি করায় ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যান। আর আসেননি।’’ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি বাসুদেব মালিক বলেন, ‘‘কাজ করে পুরাতত্ত্ব দফতর। তাই ওরাই সব বলতে পারবে।’’

মন্দির সংস্কারে অনেক টাকা দরকার জানিয়ে বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রভাকর পাল বলেন, ‘‘আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি ২৮ লক্ষ টাকা অনুমোদিত হয়েছিল। কী ভাবে, কোথায়, কতটুকু কাজ হবে, তা নিয়ে সেবায়েত ও স্থানীয়দের মতবিরোধে ঠিকাদার চলে যান।’’ ঠিকাদারকে কত টাকা দেওয়া হয়? কার দোষে টাকাটা জলে গেল? প্রভাকরবাবুর জবাব, ‘‘ওই ফাইলটাই তো পাচ্ছি না। ক’দিন আগে নবান্ন-র বৈঠকে মন্দিরটি ফের সংস্কারের জন্য সুপারিশ করেছি।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন