লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ির জঙ্গল থেকে হাতির পালকে দলমার পথে ফেরাতে চেয়েছিল বন দফতর। কিন্তু বুধবার রাতে হাতির পাল কচিধান খেয়ে মাড়িয়ে তছনছ করতেই বেঁকে বসলেন গ্রামবাসী। হাতি তাড়ানোর অভিযানে বাধা দিলেন এলাকাবাসীর একাংশ। ফলে, হাতির পালকে ফেরানোর অভিযান তো ব্যাহত হলই, সঙ্গে ১২৫টি হাতির পালের হানায় বুধবার রাতে কাঁটাপাহাড়ি অঞ্চলের গোটা দশেক মৌজায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ধান ও সব্জিচাষের দফারফা অবস্থা।
ক্ষুব্ধ চাষিরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে বৃহস্পতিবার লকাট এলাকায় লালগড়-রামগড় পিচ রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। অবরোধ-বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় মহিলারাও। ফলে, সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত টানা চার ঘন্টা লালগড়-গোয়ালতো়ড় রুটে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে। লালগড়ের ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার অজিত পাত্র অবরোধস্থলে গিয়ে বাসিন্দাদের আশ্বাস দেওয়ার পরে অবরোধ ওঠে।
বন দফতর সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যে নামতেই হাতির পালটি লালগড়ের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে চারটি দলে ভাগ হয়ে কাঁটাপাহাড়ি অঞ্চলের কুমারবাঁধ, হাড়ুলিয়া ও মধুপুর মৌজায় ধান খেতে নামে। বনকর্মী ও হুলাপার্টির সদস্যরা হাতিদের চারটি দলকে খেদিয়ে একত্রে করে কংসাবতী নদীর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বন দফতর সূত্রের দাবি, কংসাবতী পার করাতে পারলেই হাতিদের ঝাড়খণ্ডের পথে ফেরানো যাবে। অভিযান চলাকালীন হাতিরা বাঁশবেড়, লকাট, পূর্ণাপানি, টেসাবাঁধ গ্রামের ধান চাষের ক্ষতি করে। এরপরই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী হাতি খেদানো অভিযানে বাধা দেন বলে অভিযোগ।
বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়ে হাতি খেদানো অভিযান বন্ধ করে দেন বনকর্মী ও হুলাপাটির সদস্যরা। ইতিমধ্যে দিনের আলো ফুটে যায়। বাধা পেয়ে হাতি ৯০-১০০টি হাতি ফের মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে ফিরে আসে। ২০-২৫টি হাতি শালবনির পিরাকাটা রেঞ্জের জঙ্গলের দিকে চলে যায়। ওই সময় ফের ধান খেতে নেমে আর এক দফা তাণ্ডব চালায় দাঁতাল-বাহিনী। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে হাতিদের ফেরানোর অভিযান হচ্ছিল। যাওয়ার সময় হাতিরা কিছু ধান নষ্ট করেছিল। কিন্তু গ্রামবাসীরা অভিযানে বাধা দেওয়ার ফলে হাতিগুলি ছড়িয়ে যায়। এর ফলে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে।” সমস্যা মেটাতে বৃহস্পতিবার বিকেলে লালগড় ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে পুলিশ-প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বনকর্মী ও স্থানীয় গ্রামের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়। ডিএফও জানান, হাতির অভিযানের বিষয়ে সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বন দফতর সূত্রের খবর, হাতির দলটি এখন দলমায় ফিরতে চাইছে না। গত কয়েক মাসে দলমার হাতির হানায় বাঁকুড়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানিও হয়েছে। তাই হাতিদের বাঁকুড়ায় যেতে দেওয়া যাবে না। কয়েকদিন পরেই ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, হাতির পালকে ঝাড়খণ্ডের দিকে পাঠাতে চাইছে বন দফতর। কিন্তু একাংশ গ্রামবাসীর বাধায় সেই প্রক্রিয়া ভেস্তে গিয়েছে।
স্থানীয় চাষিদের অবশ্য অভিযোগ, “ভরা চাষের মরসুমে হাতিদের চাষজমি লাগোয়া এলাকা দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করছে বন দফতর। এর ফলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।”