এক পশলাতেই শহর জল থই থই

এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে কি হয়নি, ভাসছে শহর মেদিনীপুর। গলিপথ জলবন্দি। বড় রাস্তাতেও বইছে স্রোত। আধ ঘন্টার বৃষ্টিতেই যানবাহন বন্ধের জোগাড়।বর্ষার শহরে এই জল-ছবিতে বাড়ছে ভোগান্তি। আর এর মূলে অপরিকল্পিত নিকাশি।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

জল দাঁড়িয়েছে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে।

এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে কি হয়নি, ভাসছে শহর মেদিনীপুর। গলিপথ জলবন্দি। বড় রাস্তাতেও বইছে স্রোত। আধ ঘন্টার বৃষ্টিতেই যানবাহন বন্ধের জোগাড়।

Advertisement

বর্ষার শহরে এই জল-ছবিতে বাড়ছে ভোগান্তি। আর এর মূলে অপরিকল্পিত নিকাশি। শহরে বসতি বাড়ছে। মাথা তুলছে বহুতল। কিন্তু উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে কই! যেটুকু কাজ হচ্ছে, সেখানেও সেই পরিকল্পনার অভাব।

যেমনটা ঘটেছে কেরানিতলায়। সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি কেরানিতলাতে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে নালা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বৃষ্টিতে পথ চলা দায়। রাস্তার উপর জলের স্রোত বওয়া কমেনি। বরং তা একেবারে মোহনানন্দ স্কুলের কাছ পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বিধাননগরের বাসিন্দা সঞ্জয় সরকার বললেন, “ছেলেকে নিয়ে স্কুলে ও টিউশনে যাতায়াতের সময় চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হয়। মোটর সাইকেলের চাকা অর্ধেকের বেশি ডুবে যায়। ভয় করে, এই বুঝি উল্টে পড়ব।’’ হবিবপুরের বাসিন্দা অসীম করের বক্তব্য, “কেরানিতলার পাশেই রয়েছে একটি প্যাথলজিতে মায়ের কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলাম। জলের স্রোত দেখে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেছি, লোকে কী ভাবে পারাপার করছে। তারপর ঝুঁকি নিয়ে জলে নেমেছি।”

Advertisement

পুরপ্রধান প্রণব বসু অবশ্য জানালেন, কেরানিতলায় সামান্য ত্রুটির জন্য এমন হচ্ছে। আগে নিকাশি নালা বেয়ে আসা আবর্জনা আটকাতে নালার মুখে তারের জাল দেওয়া ছিল। সেখানে আবর্জনা জমত। তা পরিষ্কারও করা হত। এখন নালা চওড়া হয়েছে। পুরপ্রধান বলেন, “আর তারের জালের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেটি খোলা হয়নি। আবার পরিষ্কারও করা হয়নি। তাই এমন পরিস্থিতি।’’ তিনি জানান, এ বার জাল খুলে দিতে বলা হয়েছে।

এটা ঠিক যে তারের জাল খুলে দিলে নালার জল রাস্তায় ততটা উঠবে না। কিন্তু একেবারে বন্ধ হবে কি? পুরসভারই একটি সূত্র মানছে, রাস্তায় জল ওঠা বন্ধ করতে নিকাশি নালার মুখটা আরও একটু বড় করা প্রয়োজন ছিল। ভেতরে মানুষ সমান গর্ত হলেও যেখান দিয়ে গোটা বিধাননগর এলাকার জল ঢুকবে, সেই মুখটা আগের মতোই ছোট থেকে গিয়েছে। ফলে, ভারী বৃষ্টি হলে বিপুল জলরাশি ওই ছোট মুখ দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে পারবে না ধাক্কা খেয়ে ফের রাস্তায় উঠবে সে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এ তো গেল শহরের মধ্যস্থলের একটি অংশের কথা। এ ছাড়াও শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা ভুগছে নিকাশির রোগে। তা শহরের কেন্দ্রস্থল এলআইসি চক হোক বা বটতলাচক, দ্বারিবাঁধ হোক বা পঞ্চুরচক। সর্বত্র নালা ছাপিয়ে রাস্তায় জল দাঁড়াচ্ছে। সূর্যনগর, বিবেকানন্দপল্লি, রামকৃষ্ণনগরের মতো শহরের প্রান্তদেশের এলাকাগুলির অবস্থা আরও খারাপ। এই অংশে চারদিকে জল জমেই থাকে। রাজাবাজারের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জগবন্ধু ঘোষের কথায়, “বৃষ্টি হলেই মনে হয় শহর নয়, যেন বন্যা কবলিত গ্রামে রয়েছি। আমাদের মতো বয়স্কদের জন্য এই জল-যন্ত্রণা মারাত্মক।’’

প্রধান নিকাশি খাল দ্বারিবাঁধ সংস্কার হয় না। ধর্মার দিকে নতুন নিকাশি খালও হয়নি। মজে যাওয়া দ্বারিবাঁধ খালই শহরের বৃহৎ অংশের নিকাশির একমাত্র ভরসা। বেআইনি দখলের দাপটে এই খাল সঙ্কীর্ণও হয়েছে। তার উপর শহরের নীচু অংশটি অর্থাৎ সিপাইবাজার থেকে হবিবপুর, তোড়াপাড় থেকে শুরু করে রাজাবাজার, কর্নেলগোলা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জল কাঁসাই নদীতে ফেলার জন্য কোনও খালই নেই। আগে ধর্মার চাষজমিতে নিকাশির জল পড়ত। এখন সেখানে বসতি হয়েছে। ফলে, জল জমে বানভাসি অবস্থা তৈরি হচ্ছে। পুরপ্রধান প্রণববাবু বলেন, “ধর্মা থেকে কাঁসাই নদী পর্যন্ত একটি নতুন খাল তৈরি ও দ্বারিবাঁধ খাল সংস্কারের জন্য ‘আমরুট’ প্রকল্পে অর্থ চেয়েছি। টাকা পেলেই কাজ করতে পারব। এর জন্য কয়েক কোটি টাকা প্রয়োজন। পুরসভার পক্ষে তা ব্যয় করা সম্ভব নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন