ভাসছে রাস্তা। হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুরে। ছবি: আরিফ ইকবাল খান
টানা বৃষ্টিতে ভাসল শিল্পশহর হলদিয়া থেকে দিঘা। কোথাও জল জমে দীর্ঘক্ষণ বন্ধ হয়ে রইল রাস্তা। কোথাও আবার নিকাশি নালা উপচে জল ঢুকল ঘরে। হলদিয়া শিল্পতালুকের রাসায়নিক বর্জ্য বৃষ্টির জলের সঙ্গে মেশায় দুর্গন্ধে নাজেহাল হন এলাকার বাসিন্দারা। জলে হলদিয়ায় প্রায় এক হাজার বাড়িরও ক্ষতি হয়। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কের মনসাতলা চাতালে জল জমে থাকায় শনিবার সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে রাস্তা। রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ভোগের শিকার হন বহু লোক।
হলদিয়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে থাকায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বাতিল করা হয়েছে কর্মচারীদের ছুটি। জলমগ্ন হলদিয়ার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিল্পতালুকের রাসায়নিক বর্জ্য বৃষ্টির জলে মিশছে। সেই জলে পা দিলেই হাত-পা জ্বালা করতে শুরু করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলার দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এ দিন হলদিয়া রিফাইনারিতেও জল ঢোকে।
জলমগ্ন হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুর এলাকার প্রেক্ষাগৃহে পুরসভার উদ্যোগে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। লঙ্গরখানায় ২ হাজার লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এ দিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন হলদিয়ার মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু নস্কর। বৈষ্ণবচকের বাসিন্দা স্বপন দাস, সীতা মান্না, রেখা মণ্ডল, সুকদেব মান্নাদের কথায়, ‘‘ঘরে হাঁটু সমান জল। পরিজনেদের নিয়ে তাই ত্রাণ শিবিরে এসেছি।’’ হলদিয়া পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার জগৎবন্ধু দাস জানান, ‘‘সমস্যা সমাধানে পুরসভায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’’ শহরের নিকাশির এই হাল কেন? তিনি জানান, মূলত একটি নির্মীয়মাণ শিল্পসংস্থা বিপিসিএল নিকাশি নালা বন্ধ করে নির্মাণ কাজ করছিল। সেই কারণে নিকাশি ব্যবস্থার এমন অবস্থা। অবিলম্বে জেসিবি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া নিকাশি নালা খুলে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হলদিয়ার মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দুবাবু জানান, ‘‘হলদিয়া শহরের একাধিক ওয়ার্ডে জল ঢুকেছে। বেশ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন। আমরা কয়েকটি ত্রাণ শিবির খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
টানা বৃষ্টিতে মনসাতলা চাতালে জল জমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে এ বার ঘাটাল মহকুমায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকবে। এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পূর্ত দফতর। দেখা গিয়েছিল তৎপরতা। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা ও ঘাটাল-মেদিনীপুর দু’টি সড়কের সবকটি চাতালেই ভেন্টেড কজওয়ে তৈরি শুরু হয়েছিল। কয়েকমাস আগে থেকেই ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কে মনসাতলা এবং কেঠিয়া চাতালে ভেন্টেড কজওয়ে তৈরি শুরু হয়েছিল। তাতেও সুরাহা হল না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কেঠিয়া চাতালের কাজ যে গতিতে শুরু হয়েছিল, মনসাতলা চাতালে সে ভাবে হয়নি। আর তার জেরেই এই বিপত্তি। পরিস্থিতি যা,বর্ষার সময় আর ওই চাতালে কাজও হবে না। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই ফের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। যদিও পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার (ডিগ্রি) অমিত চৌধুরীর আশ্বাস, “বৃষ্টি কমলেই আমরা আপাতত চাতালটি উঁচু করে দেব। ইতিমধ্যেই চাতালে হিউম পাইপ পাতা হয়ে গিয়েছে”
শুক্রবার রাত থেকেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে ঘাটাল মহকুমায়। শিলাবতী নদীর জল প্রাথমিক বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি না হলেও ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে জল জমে গিয়েছে। শনিবার থেকেই স্থানীয় বাগপোতা, কাশকুলি গ্রামের নিকাশির জল ও মাঠের জল মনসাতলা চাতালে এসে জমা হয়েছে। চাতালে কাজ হওয়ায় বড় গর্তও তৈরি হয়েছে। ফলে চাতালটি আরও নীচু হয়ে গিয়েছে। সেই জলই রাস্তায় উঠে গিয়েছে। এমনিতেই ২১ জুলাইয়ের জন্য দিনতিনেক ধরে ঘাটাল পরিবহণ ব্যবস্থা কাযর্ত ভেঙে পড়েছিল।শনিবার থেকেই বাস চলাচল শুরু করেছিল।তারই মধ্যে মনসাতলা চাতালে জল জমে যাওয়ায় চন্দ্রকোনার সঙ্গে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল।