আন্দোলনে বিদ্যুৎ-ঠিকাদাররা

তিন জেলায় প্রমাদ গুনছেন গ্রাহকেরা

ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা শাখার সম্পাদক শিশির হাজরা বলেন, “কর্তব্যরত ঠিকা কর্মী জখম হলে বা তাঁর মৃত্যু হলে এতদিন সিংহভাগ ক্ষতিপূরণের দায়ভার নিত ডব্লুবিএসইডিসিএল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০১:৪২
Share:

আন্দোলনে বিদ্যুৎ-ঠিকাদাররা।—প্রতীকী চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন (ডব্লুবিএসইডিসিএল) সংস্থা নিয়োজিত ঠিকাদারি সংস্থাগুলিকেই ঠিকা বিদ্যুৎকর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও ঠিকাকর্মী দুর্ঘটনায় জখম হলে বা মারা গেলে ওই ঠিকাদার সংস্থাকেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিদ্যুতের কাজ করার সময় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।

Advertisement

সম্প্রতি ডব্লুবিএসইডিসিএল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের জানিয়ে দিয়েছিল। এর বিরোধিতা করে রাজ্যব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। আগামী ১২ জুলাই থেকে রাজ্যব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরুর ডাক দিয়েছে ঠিকাদারদের ওই সংগঠন।

ডব্লুবিএসইডিসিএল-এর নিয়োগ করা কয়েক হাজার বেসকরকারি ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে রাজ্য জুড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবার দেখভাল ও মেরামতির কাজ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা দেখভাল ও মেরামতির জন্য ৭০টি ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করেন প্রায় আটশো ঠিকা কর্মী। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় গোটা ষাটেক ঠিকাদার সংস্থার অধীনে প্রায় চারশো ঠিকাকর্মী কাজ করেন। এই পরিস্থিতিতে ঠিকাদার সংস্থাগুলি কর্মবিরতি শুরু করলে তিন জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রাহকেরা। এর ফলে চরম ভোগান্তি হবে সাধারণ মানুষের। গত ২৭ জুন সল্টলেকে বিদ্যুৎভবনে ডব্লুবিএসইডিসিএল-এর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঠিকাদার সংগঠনের প্রতিনিধিদের বৈঠক হলেও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি।

Advertisement

ইতিমধ্যেই এই তিন জেলায় ১২ জুলাই থেকে কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে বলে প্রচারপত্র বিলি শুরু করেছে ঠিকাদারদের সংগঠনটি। গ্রাহকদের বক্তব্য, বিদ্যুতের দেখভাল ও মেরামতির কাজে বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থা নিয়োগ করার পরিষেবা অনেকটাই উন্নত হয়েছে। জেলার বেশিরভাগ এলাকায় দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিংয়ের সমস্যাও এখন নেই। তবে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় ও বেলপাহাড়ির মতো ব্লকগুলির প্রত্যন্ত এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভীষণ ভাবে বিঘ্নিত হয়। এখন ঠিকাদার সংস্থাগুলি কাজকর্ম বন্ধ রাখলে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে গ্রাহকদের দাবি।

ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা শাখার সম্পাদক শিশির হাজরা বলেন, “কর্তব্যরত ঠিকা কর্মী জখম হলে বা তাঁর মৃত্যু হলে এতদিন সিংহভাগ ক্ষতিপূরণের দায়ভার নিত ডব্লুবিএসইডিসিএল। এখন পুরোটাই ঠিকাদার সংস্থার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার কালো তালিকাভুক্ত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, কাজ করলেও সময়মতো বকেয়া টাকা মেটানো হয় না। তার উপর এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধেই তাঁদের প্রতিবাদ, আন্দোলন। তিনি বলেন, ‘‘ এর ফলে গ্রাহকেরা দুর্ভোগে পড়বেন জানি। কিন্তু আমাদেরও কিছু করার নেই।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। জরুরি পরিষেবা এ ভাবে বন্ধ রাখা উচিত নয়। ধর্মঘট ছেড়ে ঠিকাদারদের আলোচনা আসতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন