গঞ্জ নারায়ণপুরে রূপনারায়ণের ভাঙন (বাঁ দিকে) ও ঘাটালে হরিসিংপুরে শীলাবতীর ভঙ্গুর নদীবাঁধ (ডান দিকে)। পার্থপ্রতিম দাস ও কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।
ভারী বৃষ্টি মানেই দু’কূল ছাপিয়ে নদীর আগ্রাসী চেহারা। আর তারপর বন্যার ভয়াবহতা। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ বর্ষায় এমনটাই সয়ে অভ্যস্ত। এ বারও ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, সে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। কারণ, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পে সংস্কার কাজ কিছুটা এগোলেও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রয়েছে সেই তিমিরেই। বন্যা মোকাবিলায় সেচ দফতরকে আগাম সতর্ক করেছে রাজ্য। সেচ দফতরেরও দাবি, বাঁধ মেরামত, খাল সংস্কারের মতো একাধিক কাজ হয়েছে। যদিও এখনও অনেক কাজই বাকি বলে অভিযোগ।
২০১৩ সালের পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার গড়পুরুষোত্তমপুরে কাঁসাইয়ের বাঁধ ভেঙে বন্যার কবলে পড়েছিল পাঁশকুড়া, তমলুক ও নন্দকুমার ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙা বাঁধ সারাতে সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত ডাকতে হয়েছিল। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কার প্রকল্পে কাজের ফলে গত কয়েক বছর পটাশপুর, ভগবানপুর এলাকায় বন্যার প্রকোপ বন্ধ করা গিয়েছে বলে দাবি সেচ দফতরের। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে বা ব্যারাজ থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়লে বন্যা পরিস্থিতি কতটা মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পাঁশকুড়া, ময়না, তমলুক, কোলাঘাট, ভগবানপুর, পটাশপুরে বিভিন্ন নদীতে বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে এখনও।
সেচ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কেলেঘাই–কপালেশ্বরী প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের মাঝে চণ্ডীয়া নদীর মাটি কেটে সংস্কার করা হয়েছে গত শীতে। কিন্তু ওই কাজের পরে ময়নার দিকে সুদামপুর পালপাড়া, সুদামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দোনাচক ও রামদাসপুরের কাছে নদী বাঁধের কিছু অংশে ধস নেমেছে। সুদামপুরের বাসিন্দা সন্দীপ সামন্ত বলেন, ‘‘বাঁধ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সেচ দফতরে জানিয়েছিলাম। কিন্তু বর্ষা এসে গেলেও নদী বাঁধের ওই অংশ মেরামত করা হয়নি।’’ ফলে, চণ্ডীয়া নদীর বাঁধ ভাঙলে ময়না ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
পূর্ব মেদিনীপুরেই কোলাঘাট শহরের কাছে পীরতলা ও তমলুক শহর সংলগ্ন দক্ষিণ চড়া শঙ্করআড়া এলাকায় রূপনারায়ণ নদের বাঁধ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে । মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙন-খরা প্রতিরোধ কমিটির অফিস সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, ‘‘বাঁধের ওই অংশ মেরামতির জন্য একমাস আগে আমরা জেলা সেচ দফতরের আধিকারিকদের স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই দুই এলাকায় বাঁধ মেরামতির কোন ব্যবস্থা হয়নি।’’
এ সব অবশ্য মানতে নারাজ সেচ দফতরের। দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার কল্পরূপ পাল বলেন, ‘‘বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই নদীবাঁধের মেরামতি চলছে। চণ্ডীয়ার বাঁধ মেরামতির ব্যবস্থা হচ্ছে। কোলাঘাটের পীরতলার কাছে রূপনারায়ণের বাঁধ সংস্কারেও প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, বন্যা মোকাবিলায় আগাম সতর্কতা হিসেবে জেলার প্রতিটি নদীবাঁধেই নজর রাখা হচ্ছে। নদীবাঁধগুলিতে নজরদারির জন্য সেচ দফতরের কর্মীদের নিযুক্ত করা হয়েছে।
(চলবে)