সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় গতি নেই, ক্ষুব্ধ প্রশাসন

হাত গুটিয়ে কৃষি সমবায়

মার্চের প্রথম সপ্তাহ পেরোতে চলল। এখনও সরকারি ভাবে ধান কেনায় তেমন গতি নেই পশ্চিম মেদিনীপুরে। ধান কেনার কাজে যে সব কৃষি সমবায় সমিতির যুক্ত হওয়ার কথা, তাদের একাংশ এখনও কাজে নামেনি বলে অভিযোগ। নথিভুক্ত সব সমবায় ধান কেনার কাজ শুরু না করায় ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসনও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৩০
Share:

পাশে: সরকারি সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা চলছে গোয়ালতোড়ের কিষান মান্ডিতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মার্চের প্রথম সপ্তাহ পেরোতে চলল। এখনও সরকারি ভাবে ধান কেনায় তেমন গতি নেই পশ্চিম মেদিনীপুরে। ধান কেনার কাজে যে সব কৃষি সমবায় সমিতির যুক্ত হওয়ার কথা, তাদের একাংশ এখনও কাজে নামেনি বলে অভিযোগ। নথিভুক্ত সব সমবায় ধান কেনার কাজ শুরু না করায় ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসনও। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি সম্প্রতি মেদিনীপুর কালেক্টরেটের সভাকক্ষে এক বৈঠকে এই অসন্তোষের কথা বুঝিয়ে দেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। ওই বৈঠকে মহকুমাশাসক-বিডিওদের পাশাপাশি সমবায় সমিতির কর্মকর্তারাও ছিলেন। জেলাশাসকের বক্তব্য, সরকারি ভাবে ধান কেনায় সকলকেই সমান তত্পর হতে হবে। কিছু সমবায় সমিতি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এটা হবে না।

Advertisement

জেলার খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়ের আশ্বাস, “ধান কেনায় গতি আনার সব রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ যদিও খাদ্য দফতরেরই এক সূত্রে খবর, গতি সে ভাবে বাড়েনি। কেমন? পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার ধানের ফলন স্বাভাবিক হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা লক্ষ্যমাত্রা বাড়ি করা হয়েছে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন। অথচ, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৮০ হাজার টন মতো ধান কেনা গিয়েছে। জেলায় এ বার ৮৪টি সমবায় সমিতির ধান কেনার কথা। কিন্তু একাংশ সমবায় ধান কেনার কাজ শুরুই করেনি। কবে করবে তারও ঠিক নেই। জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, অন্তত ৭-৮টি সমবায় এমন নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছে। অবশ্য দফতরেরই অন্য এক সূত্রের দাবি, সংখ্যাটা কম করে ১৫-১৬টি।

এখন ধান বিক্রির টাকা সরাসরি চাষির অ্যাকাউন্টে দেওয়া হচ্ছে। ধান কিনতে প্রতিটি ব্লকে স্থায়ী কেন্দ্রও করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন থাকলে এ বার সরকারের ঘরে কতটা ধান উঠবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, এখনও বহু চাষি আড়তদার এবং ফড়ের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছেন। অথচ, খোলাবাজারের থেকে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রিই লাভজনক। ব্লকের স্থায়ী কেন্দ্রে ধান বিক্রি করলে কুইন্ট্যাল পিছু ১৪৯০ টাকা আর কৃষি সমবায় সমিতিতে বিক্রি করলে প্রতি কুইন্ট্যাল ১৪৭০ টাকা দাম পাবেন চাষি। সেখানে খোলাবাজারে ধানের দাম কুইন্ট্যাল প্রতি ১১৫০-১১৬০ টাকা। গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ কর্তা মানছেন, খোলাবাজারে ধান বেচলে হাতে হাতে টাকা মেলে বলে অনেকে সেখানে ধান বিক্রি করছেন।

Advertisement

সরকারি ভাবে ধান কেনায় গতি আনতেও অবশ্য চেষ্টার কসুর করছে না জেলা প্রশাসন। প্রতি সপ্তাহে জেলায় বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারও শুরু হয়েছে। কোন ব্লকে কোথায় সরকারি ভাবে ধান ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে এসে ধান বিক্রি করলেসরকার উত্সাহ ভাতা হিসেবে কুইন্ট্যাল পিছু ২০ টাকা দেবে, প্রচারে সবই জানানো হচ্ছে। পঞ্চায়েতস্তরে চলছে মাইকে প্রচার, লিফলেট বিলি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্ঘগুলোকেও তত্পর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “এ বার দেরিতে ধান কেনা শুরু হওয়ায় এই পরিস্থিতি। তবে সব সমবায় সমিতি তত্পর হলে অবস্থা দ্রুত বদলাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন