কাঁথি দক্ষিণ

অধিকারী গড়ে বিরোধী কে, প্রশ্ন সেটাই

‘অধিকারী-গড়’ কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিরোধিতা করবে কারা, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। রাজ্য জুড়ে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে যখন চূড়ান্ত ডামাডোল, তখন দক্ষিণ কাঁথিতেও দু’তরফই ঘোষণা করেছে লড়াইয়ের কথা। ফলে নিচুতলার বাম-কংগ্রেস কর্মীরা ক্ষুব্ধ। শুধু তাই নয়, বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস কোনও পক্ষের উপরতলায় দক্ষিণ কাঁথি নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই বলেই মনে করছেন তাঁরা। কারণ কাঁথি দক্ষিণ এমন কেন্দ্র যেখানে তৃণমূলের জয় প্রায় নিশ্চিত।

Advertisement

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০১:১৯
Share:

‘অধিকারী-গড়’ কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিরোধিতা করবে কারা, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। রাজ্য জুড়ে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে যখন চূড়ান্ত ডামাডোল, তখন দক্ষিণ কাঁথিতেও দু’তরফই ঘোষণা করেছে লড়াইয়ের কথা। ফলে নিচুতলার বাম-কংগ্রেস কর্মীরা ক্ষুব্ধ। শুধু তাই নয়, বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস কোনও পক্ষের উপরতলায় দক্ষিণ কাঁথি নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই বলেই মনে করছেন তাঁরা। কারণ কাঁথি দক্ষিণ এমন কেন্দ্র যেখানে তৃণমূলের জয় প্রায় নিশ্চিত।

Advertisement

কংগ্রেস আগেই দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তারপরেই দ্বিতীয় দফায় বামফ্রন্ট ঘোষণা করে দেয় ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে সিপিআই। ফলে শুধু বিভ্রান্তি নয়, বাম-কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে ছাড়েননি কাঁথির কংগ্রেস কর্মীরা। কাঁথি মহকুমা কংগ্রেস কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কংগ্রেস কর্মীদের অভিযোগ, “বামফ্রন্ট এ ভাবে কংগ্রেসের ঘোষিত আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় কংগ্রেস কর্মীরা হতাশ। তা ছাড়া বিরোধী জোট নিয়েও ভুলবার্তা যাচ্ছে।”

Advertisement

কাঁথির প্রাক্তন বিধায়ক ও নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য শৈলজা দাসের বক্তব্য, প্রদেশ কংগ্রেস ও রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটির মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তারপর অধীর চৌধুরী কংগ্রেসের প্রথম দফার আসন তালিকা ঘোষণা করেন। বামফ্রন্টের তরফেও প্রথম দফার ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় দক্ষিণ কাঁথিকে বাদ দেওয়া হয়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার নতুন তালিকায় বামফ্রন্ট কেন সিপিআই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল, তা নিয়েই জটিলতা।

দীর্ঘ ১০ বছর পর দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভায় এ বার কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস। উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন নিচুতলার কর্মীরা। তৃণমূলের জন্ম হওয়ার পর ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হয়েছিল প্রথম। সেই সময় দক্ষিণ কাঁথিতে টানা দু’বারের কংগ্রেস বিধায়ক শৈলজা দাস। কিন্তু তৃণমূলের চাপে কেন্দ্রটি তৃণমূলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কংগ্রেস। সে বার জয়ী হন শিশির অধিকারী।

২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে একা লড়ে কংগ্রেস এই আসনে জিততে পারেনি। ২০১১ সালের বিধানসভায় ফের কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটের লড়াইয়ে জয়ী হয় তৃণমূল। বিধায়ক হন শিশিরবাবুর মেজো ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী। ২০১৪ সাল লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একক ভাবে কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে, পায় চতুর্থ স্থান। এ বার আবার প্রার্থী ঘোষণা করতে চলেছিল কংগ্রেস। কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোট হলে তা আর আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।

কংগ্রেস কর্মী গৌতম দাসের কথায়, “আমরা বিরোধী জোটের হয়ে প্রচারে নেমে পড়েছিলাম। কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হলেও দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছিল। এখন কী হবে জানি না।’’ তাঁর সাফ কথা, ‘‘এখন মনে হচ্ছে জোটের নামে পিছন থেকে কাঁথিতে কংগ্রেসকে ছুরি মারা হচ্ছে। কংগ্রেস প্রার্থী দিতে না-পারলে আমরা সিপিআই প্রার্থীর হয়ে প্রচার করব না, এ টুকু বলতে পারি।”

অন্য দিকে দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থী ও দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম প্রধান দাবি করেছেন, দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রটি সিপিআইয়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই সিপিআই এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। তাই তাঁরা আসনটি ছাড়তে নারাজ। উত্তমবাবু বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী জোট সঙ্গী হয়ে কংগ্রেস সিপিআইকে সমর্থন করবে এই আশাই রাখছি।”

অন্য দিকে কংগ্রেস নেতা শৈলজা দাস অবশ্য আশাবাদী। তাঁর বক্তব্য, “মানুষের ইচ্ছেতেই জোট হচ্ছে। দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রটি নিয়ে জটিলতা যেমন আছে, সে জটিলতা কাটানোর মতো সময়ও রয়েছে।’’ শুক্রবার কলকাতায় আলোচনা হয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএমের। শৈলজাবাবুর দাবি সেখানে মূলত প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সিপিএমও একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ের পক্ষে।

কিন্তু শৈলজাবাবু যাই বলুন না, কাঁথির কংগ্রেস কর্মীদের হতাশা কাটেনি। তাঁদের সাফ কথা, “দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রে ‘নো-কংগ্রেস,
নো জোট’।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন