বিয়ের বারো বছর পরেও বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিয়ে নির্যাতন চলছিল। তার জেরেই এক বধূকে খুনের অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। নিহতের বাপের বাড়ির তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নিহতের স্বামী ও দুই ননদকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে খড়্গপুর গ্রামীণের ঘাগড়ায় তাপসী দে (৩০) নামে ওই বধূর গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বাপের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, তাপসীকে খুন করা হয়েছে। নিহতের বাবার অভিযোগ পেয়ে স্বামী কমল দে, ননদ ঝর্না দে ও মধু দে-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হলে কমলের পুলিশ হেফাজত ও বাকি দু’জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়।
ঝাড়গ্রামের বাছুরডোবার মেয়ে তাপসীর সঙ্গে বছর বারো আগে বিয়ে হয়েছিল খড়্গপুরের ঘাগড়ার কমলের। বিয়ের সময় কমল যন্ত্রপাতির কারিগরের কাজ করতেন। পরে তিনি চা দোকান খোলেন। বিয়ের সময় তাপসীর বাপের বাড়ি থেকে সোনা-আসবাব ছাড়াও এক লক্ষ টাকা নগদ দিতে হয়েছিল। কমলের সাত বোন। বাবা-মা মারা গিয়েছেন বছর কয়েক আগে। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও চার জন অবিবাহিত। অবিবাহিত বোনেদের কথা কমল গোপন করেছিলেন বলে তাপসীর পরিবারের অভিযোগ। এ নিয়ে অশান্তি ছিলই।
বছর দশেক আগে কমল-তাপসীর প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় অশান্তি চরমে ওঠে। থানা-পুলিশও হয়েছে। তবে অশান্তি থামেনি। বহুবার বাপেরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য তাপসীকে চাপ দেওয়া হত বলে অভিযোগ। বছর খানেক আগে তাপসী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর মেয়ের শ্বশুরবাড়ির দাবিমতো টাকা দেওয়া বন্ধ করেন তাপসীর বাবা পেশায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ধ্রুবকুমার মণ্ডল।
ধ্রুববাবুর অভিযোগ, প্রতিদিনই ননদরা তাপসীকে মানসিক অত্যাচার করত। এমনকী বোনের উস্কানিতে উত্তেজিত হয়ে কমলও তাপসীকে মারধর করতেন। প্রতিবেশীরা জানান, প্রতিদিন ওই বাড়ি থেকে অশান্তির আওয়াজ শোনা যেত। বৃহস্পতিবার বিকেলেও একপ্রস্ত অশান্তি হয়। তার কিছুক্ষণ পরেই স্ত্রীর দেহ সিলিংয়ে ঝুলছে বলে চিৎকার শুরু করেন কমল। তারপর কারও কথা না শুনে তাঁরাই দেহ নামিয়ে নেন। পরে খবর দেওয়া হয় তাপসীর বাপের বাড়িতে। নিহতের জামাইবাবু রতন মণ্ডল বলেন, “আমার শ্যালিকার উপর প্রতিদিন অত্যাচার হত। চার বোনের কথা শুনে ওঁর স্বামীও মারধর করত। আমাদের ধারণা, তাপসীকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওর শরীরে মারধরের দাগ স্পষ্ট।’’ আর ধ্রুববাবুর বক্তব্য, ‘‘জামাই ও ওর বোনেরা আমার শান্ত মেয়েটাকে মেরে ফেলল। ওদের শাস্তি চাই।’’