কেশপুর আছে কেশপুরেই

শাসকের একলাখি জয়

‘তৃণমূল এখানে অনেক এগিয়ে থাকবে’— ভোটের দিনই বলেছিলেন শাসক দলের প্রার্থী। চব্বিশ ঘণ্টা পরে ফারাকের অঙ্কটা পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান। জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘মার্জিন এক দশ (১ লক্ষ ১০ হাজার) হবেই। মিলিয়ে নেবেন।’’অঙ্কটা প্রায় মিলেই গেল বৃহস্পতিবার দুপুরে। তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহা জিতলেন ১,০১,১৫১ ভোটে। ফের একলাখি ব্যবধানে ফিরল ভোটের কেশপুর।

Advertisement

বরুণ দে

কেশপুর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:১৯
Share:

কেশপুর বিধানসভা আসনে জয়ী প্রার্থী তৃণমূলের শিউলি সাহা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

‘তৃণমূল এখানে অনেক এগিয়ে থাকবে’— ভোটের দিনই বলেছিলেন শাসক দলের প্রার্থী।

Advertisement

চব্বিশ ঘণ্টা পরে ফারাকের অঙ্কটা পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান। জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘মার্জিন এক দশ (১ লক্ষ ১০ হাজার) হবেই। মিলিয়ে নেবেন।’’

অঙ্কটা প্রায় মিলেই গেল বৃহস্পতিবার দুপুরে। তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহা জিতলেন ১,০১,১৫১ ভোটে। ফের একলাখি ব্যবধানে ফিরল ভোটের কেশপুর।

Advertisement

রাজনীতির হানাহানি, বিরোধী কণ্ঠরোধের মতোই কেশপুর নামটার সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে শাসকের বিপুল জয়ের ‘ট্র্যাডিশন’। বাম আমলে ৫০-৬০ হাজারের কম ‘লিড’ হত না। ২০০১-এ তো সিপিএমের নন্দরানি ডল জিতেছিলেন ১ লক্ষ ৮ হাজার ভোটে। রাজ্যে সেটাই ছিল রেকর্ড ব্যবধান। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়েছিল। তবু ছবিটা বদলায়নি। ২০০৬-এ সিপিএম জেতে ৬৬ হাজার ভোটে। এমনকী ২০১১-র ঝড়েও ৩৪ হাজার ভোটে জেতেন সিপিএমের রামেশ্বর দোলুই।

পালাবদল পরে এই জয়ের হাওয়া লাগে তৃণমূলের পালে। ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে কেশপুরে তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল ১ লক্ষ ৩৩ হাজার। আর ২০১৪-র লোকসভায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার। ফলে, এ বার লক্ষাধিক ব্যবধানটা তৃণমূলের কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। তবু কেশপুরের লড়াইটা তৃণমূল প্রার্থীর কাছে সহজ ছিল না। হলদিয়ার বিদায়ী বিধায়ক শিউলির কাছে কেশপুর ছিল অচেনা ভোট-ময়দান। কোন্দল কাঁটাও বিঁধছিল। কিন্তু কেন্দ্রটি যে কেশপুর। তাই কিছুই জয়ের পথে কাঁটা হয়নি।

বাম আমল থেকেই গ্রাম দখলের সংঘর্ষ, সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের দাপট আর এক বগ্গা রাজনীতিতে অভ্যস্ত কেশপুর যে কেশপুরেই রয়েছে, তা বোঝা গিয়েছিল ১১ এপ্রিল ভোটের দিন। বুথে বুথে লম্বা লাইন নেই। উল্টে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নাকের ডগায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জটলা। আর সুনসান বুথেই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল ভোটদানের হার। দিনের শেষে কেশপুরের মোট ২৭৩টি বুথের মধ্যে ১৯টিতে ৯৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। আর গোটা কেন্দ্রে ভোটদানের হার ৯০ শতাংশ।

অতীত বলছে যে বার নন্দরানি ডল লক্ষাধিক ভোটে জিতেছিলেন, সে বারও বহু বুথে ভোট পড়েছিল ৯০ শতাংশের বেশি। তখন বিরোধী তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, সন্ত্রাস ছড়িয়ে, ছাপ্পা দিয়ে জিতেছে সিপিএম। বিরোধী নেতা-কর্মীদের বাড়িতে সাদা থান পাঠিয়ে আগাম হুমকি, চটের আড়ালে থেকে ভোট নিয়ন্ত্রণ, ব্যালট বাক্সের পাশের খোলা জানলা থেকে চোখ রাঙানি— এ সব অভিযোগও ছিল। এ বার সেই সুর বর্তমান বিরোধী সিপিএমের গলায়।

ভোট অবাধ হয়নি বলে ১১ এপ্রিলই নালিশ করেছিলেন জোটের সিপিএম প্রার্থী রামেশ্বর দোলুই। ভোট শুরুর আড়াই ঘণ্টার মাথায় সিপিএমের জোনাল কার্যালয় জামশেদ ভবনে বসে রিটার্নিং অফিসারকে ফোনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এ রকম ভোটের মানে কী! পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী কিচ্ছু করছে না।’’ এ দিনও বললেন, ‘‘কেশপুরে কী ভাবে ভোট হয়েছে তা মানুষ জানেন। নতুন করে আর কী বলব।”

তবে এ দিন সকাল আটটায় গণনা শুরুর কিছুক্ষণ পরে মেদিনীপুর কলেজের ভোটগণনা কেন্দ্রে শিউলি যখন পৌঁছলেন, তখন কিছুটা হলেও চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু প্রথম রাউন্ড গণনা শেষেই হাসি চওড়া হল। ‘ফার্স্ট ল্যাপে’ই যে এগিয়ে গেলেন ১০,৩০০টি ভোটে! এরপর যত রাউন্ড এগিয়েছে, বেড়েছে ব্যবধান। এক লাখি জয়ের শেষে শিউলি বললেন, ‘‘সব কুৎসাকে নস্যাৎ করে রায় দিয়েছেন কেশপুরের মানুষ। এখানে আমাদের অনেক সহকর্মী শহিদ হয়েছেন। এই জয় আমি সেই সব শহিদদের উৎসর্গ করছি।’’

কিন্তু নন্দরানি ডলের রেকর্ড তো ভাঙা হল না? শিউলি এ নিয়ে কিছু বললেন না। তবে তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানের কথায়, ‘‘আমি বলেছিলাম এক দশ (১ লক্ষ ১০ হাজারে জয়) হবে। কিন্তু এটা তো ফুটবল খেলা নয় যে চোখের সামনে গোলগুলো দেখা যায়। আর রেকর্ড যা গড়ার তা তো দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) গড়েই দিয়েছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন