আঁটোসাটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বড়দিনে ভিড় উপচে পড়ল দিঘার সৈকতে

রবিবার রাতভরই একে-একে পর্যটকদের গাড়ি ঢুকতে থাকে দিঘায়। বেশ কয়েকটি জোন পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট করেছিল পর্ষদ। পিকনিক স্পটে গাড়ি নিয়ে যাওয়ায় ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
Share:

উৎসাহ: বড়দিনে ভিড় দিঘার সৈকতে। নিজস্ব চিত্র

একে বড় দিন, তায় সৈকত-উৎসব ও ‘উইন্টার কার্নিভ্যাল’। সব মিলিয়ে এ বছরের ২৫ ডিসেম্বর জমজমাট ভিড়ের সাক্ষী থাকল দিঘা। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত দশ বছরে এমন জনসমাগম দেখেনি এই সৈকত শহর। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক সুজন দত্ত বলেন, “এ দিন প্রায় দেড় লক্ষ পর্যটক এসেছেন দিঘায়। তবে এত মানুষ একসঙ্গে আসায় নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে।”

Advertisement

রবিবার রাতভরই একে-একে পর্যটকদের গাড়ি ঢুকতে থাকে দিঘায়। বেশ কয়েকটি জোন পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট করেছিল পর্ষদ। পিকনিক স্পটে গাড়ি নিয়ে যাওয়ায় ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় এই নিয়ম কার্যকরী হয়নি বলেই অভিযোগ। যেমন, ওল্ড দিঘায় অ্যাকোয়ারিয়াম ঘাটের কাছে ঝাউবাগান এবং নিউ দিঘার ক্ষণিকা ঘাট ও পুলিশ হলিডে হোমের কাছে পিকনিকের জন্য স্পট ঠিক করা ছিল। দূষণ এড়াতে এই এলাকার বাইরে পিকনিক করা যাবে না বলে জানিয়েছিল পর্ষদ। কিন্তু এত মানুষ পিকনিক করতে আসায় স্থান সঙ্কুলান হয়। ফলে যেখানে-সেখানে শুরু হয়ে যায় পিকনিক। তা ছাড়া, যানজট এড়াতে দিঘায় একমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা চালু করে প্রশাসন। কিন্তু এত গাড়ি আসার ফলে দফায় দফায় যানজট হয়। ওল্ড দিঘার নেহরু মার্কেটের কাছে বেলা ১২টা নাগাদ, নিউ দিঘার বটতলার কাছে সাড়ে ১১টা নাগাদ এবং দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের কাছে সাড়ে ১২টা নাগাদ যানজট সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।

তবে এ দিন রেকর্ড ভিড় হবে আঁচ করে নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তি সতর্ক ছিল প্রশাসন। ওডিশার সীমান্তে এ দিন দিনভর নাকা তল্লাশি চলে। দিঘা জুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তার জন্য টহল দেয় পুলিশ বাহিনী। সমুদ্রস্নানে নামেন বহু সংখ্যক অতিরিক্ত নুলিয়া। ওল্ড দিঘা থেকে উদয়পুর পর্যন্ত প্রতিটি ঘাটেই এ দিন নজরদারি চালান নুলিয়া ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। স্পিডবোটে সমুদ্রে টহল দেয় কোস্টাল পুলিশ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহর জুড়ে পেট্রলিং করে মহিলা পুলিশের একটি দল। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর কথায়, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের সাহায্যের জন্য দিঘায় খোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি হেল্প ক্যাম্প।”

Advertisement

শীতের সময়ে অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকে দিঘার সমুদ্র। তাই এ দিন সকাল থেকেই ধুম পড়ে সমুদ্রস্নানের। পর্যটকরা যাতে কোমর জলে না নামেন, সে জন্য সৈকতে মাইকিং করতে থাকেন নুলিয়ারা। শহর জুড়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী মোতায়েন করে রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতি ও উন্নয়ন পর্ষদ। ওল্ড দিঘার অ্যাকোয়ারিয়াম, নিউ দিঘার জুরাসিক পার্ক, সায়েন্স সিটি ও অমরাবতী পার্কে ভিড় করেন বহু পর্যটক। সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় হেলিকপ্টার ও হট এয়ার বেলুন রাইডে।

পর্যটকের প্রবল ভিড়ে হোটেলগুলিতে যাতে ‘রুম ব্ল্যাকিং’ না হয় সে জন্য এ দিন তৎপর ছিল ‘দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “পর্যটকদের তাদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, সে বিষয়ে আমরা সচেতন ছিলাম।”

নদিয়া থেকে আসা সোহম চক্রবর্তী জানান, বড়দিনে সৈকত-উৎসব ও উইন্টার কার্নিভ্যালের জন্যই দিঘায় এসেছেন। আবার রেলকর্মী সমীরণ সাহার কথায়, “এত ভিড় হবে ভাবিনি। তবে দিঘাকে নতুন চেহারায় খুব ভাল লাগছে। নিরাপত্তাও বেশ আঁটোসাঁটো। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিশ্চিন্তে বেড়াচ্ছি।”

সৈকতের ঠিক পাশেই ফুচকা আর মশলা-মুড়ির দোকান নিমাই পণ্ডার। তিনি বলেন, “সন্ধের আগেই সব খাবার শেষ হয়ে যাবে মানে হচ্ছে। এত ভিড় হবে জানলে আরও বেশি করে জিনিস আনতাম।”

সব মিলিয়ে বড়দিনে রেকর্ড আনন্দেরও সাক্ষী থাকল দিঘা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন