তোলাবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নতুন নয়। এই তোলাবাজির অভিযোগে বছর খানেক আগেই গ্রেফতার হয়েছিল সে। মাস খানেক আগে জামিন মিলেছে। আর তারপরই ফের স্বমহিমায় খোকন সাঁতরা। এ বার হলদিয়ার এই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় এক মহিলাকে মারধর আর শ্লীলতাহানির।
শনিবার রাতে হলদিয়ার রাজারচক এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা খোকনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খোকন পলাতক। তাকে ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে বন্দর শহর হলদিয়ার রাজারচক এলাকা পুজো হচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা হাজির ছিলেন সেখানে। আর তখনই পুজোস্থলে আসে মদ্যপ খোকন। মণ্ডপে বসে থাকা দুই বৃদ্ধকে হঠাৎ সে মারধর করতে থাকে বলে অভিযোগ। আর তারই প্রতিবাদ করেন স্থানীয় মহিলা।
ওই মহিলার অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর করতে শুরু করে খোকন। ওই মহিলার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বন্দুকের বাঁট দিয়ে। প্রথমে থতমত খেলেও কয়েকজন বাসিন্দা মহিলাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যান। কিন্তু তাদের দিকেও তেড়ে যায় খোকন। আর ওই মহিলাকে শুধু মারধর নয়, রাস্তায় সকলের সামনে খোকন তাঁকে ধর্ষণের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকা ছাড়ে খোকন ও তার বাহিনী। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই মহিলাকে হলদিয়া বন্দর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
রবিবার সকালে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে সরাসরি হলদিয়া থানায় যান ওই মহিলা। সেখানেই খোকনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় তৃণমূল বুথ কমিটির ওই মহিলা সদস্য। মহিলার কথায়, ‘‘এলাকায় প্রায়ই তোলাবাজি করে খোকন। কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়। আর আমি প্রতিবাদ করায় জুটল মার। যাঁরা সাহায্য করতে এসেছিলেন, তাদেরও রেয়াত করেনি খোকন।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খোকনের কুকীর্তি এই প্রথম নয়। তোলাবাজির অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩রা জানুয়ারি খোকন গ্রেফতার হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। গ্রেফতার হয়ে জেলেও গিয়েছিল সে। পরে জামিনে ছাড়া পেয়েই ফের এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে খোকন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, খোকন আর তার সঙ্গীদের দাপটে হলদি নদীর তীরে ছোট ব্যবসায়ীরা তোলা দিতে বাধ্য হন। বিশ্বকর্মা পুজোর সময় পান ও ফুচকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে খোকনের বিরুদ্ধে। এমনকী তৃণমূলের কয়েকজন স্থানীয় নেতার প্রশ্রয়ে খোকনের এমন রমরমা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘খোকনের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। ওই মহিলার সঙ্গে খোকন যা করেছে তা অন্যায়। পুলিশ নিশ্চয় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’ হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলও ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনাকে ধিক্কার জানাই। পুলিশ যত তাড়াতাড়ি ওই দুষ্কৃতীকে ধরতে পারে, ততই এলাকার জন্য মঙ্গল।’’