কোথাও ধৃত দাদা, কোথাও স্বামী

স্বজনের নির্যাতনেই শেষ জীবন

রাত পোহালেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীকে কুর্নিশ জানানোর দিন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, নারী নির্যাতনে প্রথম সারিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নাম।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৫
Share:

রাত পোহালেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীকে কুর্নিশ জানানোর দিন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, নারী নির্যাতনে প্রথম সারিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নাম। শুধু তাই নয়, হিসেবে বলছে মহিলারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই। নারী দিবসের ঠিক আগের দিন সামনে এল নারী নির্যাতনের তিন ছবি। আর তিনটিরই ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুর। পরিসংখ্যানের বিচারে যে জেলায় শিক্ষার হার সবথেকে বেশি।

Advertisement

ঘটনা: ১

স্বামী ঘর বেঁধেছিল অন্য এক মহিলার সঙ্গে। তাই ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকছিলেন বছর চল্লিশের নমিতা বেরা।

Advertisement

বাবার কাছ থেকে জমি চেয়েছিলেন নিজে বাড়ি তৈরি করবেন বলে। তা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ শুরু। আর সেই জমি নিয়ে বিবাদের জেরেই নমিতাদেবীকে লাথি মেরে খুনের অভিযোগ উঠল দাদার বিরুদ্ধে। রবিবার সন্ধ্যায় কোলাঘাটের ভোগপুরের এই ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে দাদাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নমিতাদেবীরা ছয় ভাই-বোন। বছর কুড়ি আগে গ্রামেরই অমলেন্দু বেরার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। তাঁদের বছর উনিশের এক ছেলে রয়েছে। নমিতাদেবীর স্বামী ফের বিয়ে করায় ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন তিনি। বিড়ি বেঁধে চলত দিন গুজরান। বাবার কাছে জমি চেয়ে বাড়ি করতে চেয়েছিলেন তিনি। মেজদা প্রদীপ বলেছিলেন, শ্মশানের কাছে জমি নিতে হবে। তাতে নারাজ ছিলেন নমিতাদেবী। রবিবার বিকেলে ফের ভাই-বোনের ঝামেলা শুরু হয়। সেই সময়ই প্রদীপ, বোনকে লাথি মারেন বলে অভিযোগ। নমিতাদেবীকে মেচেদার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। তাঁর ছেলে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মামা প্রদীপ বাগের বিরুদ্ধে। এরপরই পুলিশ প্রদীপকে গ্রেফতার করে।

ঘটনা: ২

পণের টাকা না পাওয়ায় এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে।

রবিবার রাতে নন্দকুমারের চক জিয়াদিঘি গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মামনি বর্মণ (২৫ )। মৃতার বাবা শ্বশুরবাড়ির পাঁচ সদস্যর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করার পরই পুলিশ গ্রেফতার করে মহিলার স্বামী হরেকৃষ্ণ বর্মণকে। বাকিরা পলাতক। চক জিয়াদিঘি গ্রামের বাসিন্দা হরেকৃষ্ণ বর্মণ পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। হরেকৃষ্ণের সঙ্গে নন্দকুমারের মামনির বিয়ে হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। তাঁদের তিন বছরের মেয়ে রয়েছে। অতিরিক্ত পণের দাবিতে মামনির উপর অত্যাচার করতেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সেই নিয়ে পরিবারে অশান্তি লেগেই ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় অশান্তি চরমে ওঠে। কিছু পরেই প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, আগুনে পুড়ে গিয়েছেন মামনি। পড়শিরা গিয়ে বাড়ির শৌচাগার থেকে মামনির পো়ড়া দেহ উদ্ধার করে। ততক্ষণে অবশ্য পালিয়ে গিয়েছে ওই বধূর স্বামী-সহ পরিবারের অন্যরা। পরে মহিলার বাবার অভিযোগ পেয়ে গ্রেফতার করা হয় মহিলার স্বামীকে।

ঘটনা: ৩

পারিবারিক অশান্তির জেরে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠল নন্দকুমারের কুমারআড়ায়।

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতের এই ঘটনায় মৃতের নাম অঞ্জলি সামন্ত (৪৫)। শুকদেব সামন্ত নামে তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার পেশায় পানচাষি শুকদেবের। রবিবার রাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়ার সময় হঠাৎ শুকদেব কাঠের টুকরো দিয়ে অঞ্জলিদেবীর মাথায় আঘাত করেন। গুরুতর জখম অবস্থায় অঞ্জলিদেবীকে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করানো হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন