থানার পথে ধৃতেরা। ইনসেটে উদ্ধার হেরোইন। নিজস্ব চিত্র
নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল ছেলে। বোঝানোর পরেও শোধরানোর কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। শেষমেশ বাবা-ই পুলিশে জানিয়ে ধরিয়ে দিল ‘গুণধর’ ছেলেকে।
অনুপম পাইন নামে বছর চব্বিশের ওই যুবককে শুক্রবার হেরোইন-সহ গ্রেফতার করেছে তমলুক থানার পুলিশ। ধরা পড়েছে অনুপমের আর এক সঙ্গী দেবরাজ বসু। দু’জনের কাছ থেকে হেরোইনের ২৫টি পুরিয়া উদ্ধার হয়েছে। উল্লেখ্যে, এর আগে বহু মাদকচক্রের সন্ধান পাওয়া গেলেও হেরোইন-সহ হাতেনাতে গ্রেফতারের ঘটনা শহরে এই প্রথম।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক শহরের ধারিন্দা এলাকার বাসিন্দা অনুপম রাজ্য সরকারের একটি দফতরের অস্থায়ী কর্মী। তার বাবা রাজ্য সরকারের একটি দফতরের জেলা আধিকারিক। এ দিন তিনি জানিয়েছে, গত সাত-আট বছর ধরেই মাদকাসক্ত অনুপম। প্রথমে গাঁজা, ডেনড্রাইট, ঘুমের ওষুধ, কফ সিরাপ দিয়ে সে নেশা করত। গত মার্চ থেকে সেই নেশার পরিমাণ বেড়ে যায়। এ নিয়ে বাড়িতে অশান্তিও লেগে থাকত। মাঝে একবার পুলিশে নালিশ জানিয়েছিলেন অনুপমের বাবা। সেবার সে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পায়।
অনুপমের বাবা বলেন, ‘‘প্রেমের সম্পর্কে আঘাত পেয়ে স্কুলের সময় থেকেই ছেলে নেশা করা শুরু করেছিল। কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল কিন্তু মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। ওকে জলপাইগুলিতে আমার এক বন্ধুর গাড়ির শোরুমে কাজে পাঠিয়েছিলাম। ১১ মাস পরে সেখান থেকে ফিরে আসে।’’
পারিবারিক সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অনুপম তার মায়ের কাছ থেকে জোর করে ২০০০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সে ঘটনা জানতে পেরে অনুপমের বাবা পুলিশকে ফোনে জানান এবং ছেলে কোথায় যেতে পারে, সম্ভাব্য সেই জায়গাগুলি বলেন। এর পরেই পুলিশ হাসপাতাল মোড়ে তল্লাশি চালায়। ধরা পড়ে অনুপম এবং দেবরাজ। গ্রেফতারের খবর পেয়ে তারা বাবা থানায় গিয়ে তাকে শনাক্ত করেন। ছেলের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি জানিয়েছেন, মাদকাসক্ত অনুপমকে সম্প্রতি তাঁরা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি।
এ দিন অনুপমের সঙ্গে ধরা পড়া দেবরাজ পেশায় রাজমিস্ত্রি। তার বাড়ি হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন শঙ্করআড়া এলাকায়। অনুপমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। পুলিশ দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, তারা খড়্গপুর এবং মেদিনীপুর এলাকা থেকে হেরোইন সংগ্রহ করত। নিজেরা হেরোইন নেওয়ার পাশাপাশি শহরে বেশ কিছু যুবকের কাছে বিক্রিও করত।
ঘটনায় শহরের অভিভাবকদের একাংশ উদ্বিগ্ন। শহরের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের বাবা প্রশান্ত পাল এ নিয়ে বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সে সময় মদ, গাঁজা এ ধরনের মাদক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার হেরোইন উদ্ধার হওয়ায় দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আমরা চাই, প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুক।’’