নেশা কমাতে লক্ষ্য যুবসমাজই

প্রচারের জৌলুসই সার। কমানো যায়নি নেশার প্রবণতা। গত ৩১ মে মাদক বিরোধী দিবসে ঘটা করে পদযাত্রা, সচেতনতা শিবির, নাটকের আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু তারপরে যে কে সেই। অভিযোগ, অন্ধকার নামলেই খড়্গপুরের বিভিন্ন মাঠ, পুকুর পাড়ে অবাধে বসছে নেশার আসর।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

প্রচারের জৌলুসই সার। কমানো যায়নি নেশার প্রবণতা।

Advertisement

গত ৩১ মে মাদক বিরোধী দিবসে ঘটা করে পদযাত্রা, সচেতনতা শিবির, নাটকের আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু তারপরে যে কে সেই। অভিযোগ, অন্ধকার নামলেই খড়্গপুরের বিভিন্ন মাঠ, পুকুর পাড়ে অবাধে বসছে নেশার আসর। স্কুল-কলেজ চত্বরেই বিকোচ্ছে নানা নেশার দ্রব্য। শুধু খড়্গপুর নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছবিটা কমবেশি একইরকম। পুলিশের দাবি, মানুষ সচেতন না হলে এই প্রবণতা ঠেকানো কঠিন। এই পরিস্থিতিতে তামাক ও মাদক সেবনের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে কোমর বেঁধে নামছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মাদকের নেশা আর শুধু কোনও একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। হাত ঘুরে ভিন্‌ রাজ্যের মাদক দ্রব্যও জেলায় ঢুকে পড়ছে। জেলার অন্য এলাকার মতো খড়্গপুরেও নেশাগ্রস্তদের আনাগোনা বন্ধ করা যায়নি বলে অভিযোগ। স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাও সহজেই হাতে পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। খড়্গপুর শহরের ইন্দা, পুরাতনবাজার, কৌশল্যা, বাসস্ট্যান্ড, পাঁচবেড়িয়া, মালঞ্চ, গিরি ময়দান এলাকায় মাদকের রমরমা বেশি বলে অভিযোগ।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খড়্গপুরের সিলভার জুবিলি হাইস্কুলের মাঠে সন্ধে হলেই নেশাগ্রস্ত যুবকদের আনাগোনা বাড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল মাইতির ছেলে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। নির্মলবাবু বলেন, “স্কুলের পরিবেশে ক্রমে খারাপ হচ্ছে। আমাদের সময়ে স্কুলে এ সব চলত না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘স্কুলের বাইরে ছেলেরা প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। গোপনে অন্য মাদক সেবনের প্রবণতাও বাড়ছে। অন্য ছেলেরা এ সব দেখছে। তাই নিজের ছেলেকে নিয়েও আশঙ্কা বাড়ছে। এ সব দেখেও স্কুল কর্তৃপক্ষ উদাসীন।”

ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষানিকেতনের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ বলেন, “আমার স্কুলের বহু ছাত্র কম বয়সে সিগারেটের নেশা করছে। অনেক পড়ুয়াকে হাতেনাতে ধরেও বুঝিয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের অকৃতকার্য কিছু প্রাক্তন ছাত্রকে চিনি, যারা মাদকাসক্ত। তাদের সঙ্গে অনেক সময়ে কয়েকজন ছাত্র বিকেলে স্কুলের পিছনের মাঠে আড্ডা দিচ্ছে বলে শুনছি। এই প্রবণতা কমাতে অভিভাবক, শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে।”

এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে এ বার পথে নামবে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। প্রাথমিক ভাবে সিগারেট ও অন্য তামাক জাতীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে জেলা ও ব্লকস্তরে কমিটি তৈরি করে প্রচার চালানো হবে। এরপরে জেলার ব্লক প্রতি একটি স্কুল ও প্রতিটি মহকুমার একটি কলেজে মাদক বিরোধী প্রচার চালানো হবে। এই কর্মসূচির জন্য প্রায় ১৬ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনুমোদনও হয়েছে। এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘শুধু সচেতনতা শিবির নয়। ম্যাজিক, নাটকের মাধ্যমে মাদক ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। পড়ুয়াদের জানানো হবে মাদকের কুপ্রভাবও।’’

জেলা মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এখন ব্লক স্তরে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই বিভিন্ন এলাকায় তামাক বিরোধী প্রচার চালানো হবে। তামাকের সঙ্গে সঙ্গে মাদক সেবনের প্রবণতা কমাতে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হবে। তুলে ধরা হবে এই বিষয় সংক্রান্ত আইনের নানা দিকও।’’ পুলিশ, আফগারি দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের মেলবন্ধনে এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন নেশার ফলে কথায় জড়তা, ঘাম, খাবারে অরুচি, অযথা রেগে যাওয়া, হাত-পা কাঁপার মতো নানা উপসর্গ দেখা যায়। আর এ ভাবে একজন মানুষ ক্রমে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। শুধু মাদকের কুপ্রভাব নয়, মাদকের নেশা নিরাময়ে যোগাসন, মনসংযোগ বাড়ানোর মতো নানা কৌশলেরও সাহায্য নেওয়া হবে। মূলত তিনটি পর্যায়ে ছাত্র ও যুব সমাজকে সচেতন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে, নেশাগ্রস্তদের সচেতন করা ও পরামর্শ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, নেশাগ্রস্তদের পরিজনদেরও নানা পরামর্শ দেওয়া হবে। সবশেষে মাদকের চাহিদা কমাতে প্রচার অভিযান চালানো হবে। তৃতীয় পর্যায়ে, যারা নেশা কাটিয়ে মূলস্ত্রোতে ফিরেছে তাঁদের নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে।

জেলার এই কর্মসূচির নোডাল অফিসার তথা জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “তামাক ও মাদকের নেশা নিরাময়ে একদিনের প্রতীকী সচেতনতা যথেষ্ট নয়। তাই আমরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালাব।’’ তিনি বলেন, ‘‘নেশাগ্রস্ত ও তাদের পরিজনেদের সচেতনতা বাড়ানো, পরামর্শ দেওয়া ও নিরাময়ের উপায়ও বলে দেওয়া হবে। সমাজকে নেশামুক্ত করার উদ্দেশে আগামী এক বছর ধরে এই কর্মসূচি চলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন