অগ্নিদগ্ধ তরুণীর মৃত্যু, ফুঁসছে খাপ্রেলবাজার

বাড়িতে চড়াও হয়ে বাবা-মায়ের সামনেই এক তরুণীকে গালিগালাজ করেছিল পাড়ার কিছু যুবক। অভিযোগ, তার জেরে শনিবার বিকেলে ওই তরুণী গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গভীর রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হল। মেদিনীপুর শহরের খাপ্রেলবাজারের ঘটনা। মৃতার বাবার অভিযোগ পেয়ে শনিবার বিকেলেই সুকুমার ভকত নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share:

পুজোর আবহেও প্রতিবাদ। খাপ্রেলবাজারে মোমবাতি মিছিল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বাড়িতে চড়াও হয়ে বাবা-মায়ের সামনেই এক তরুণীকে গালিগালাজ করেছিল পাড়ার কিছু যুবক। অভিযোগ, তার জেরে শনিবার বিকেলে ওই তরুণী গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গভীর রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হল। মেদিনীপুর শহরের খাপ্রেলবাজারের ঘটনা। মৃতার বাবার অভিযোগ পেয়ে শনিবার বিকেলেই সুকুমার ভকত নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “তিন যুবক বাড়িতে এসে ওই তরুণীকে খারাপ কথা বলেছিল। তা সহ্য করতে না পেরেই তরুণী গায়ে আগুন দেন। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।” রবিবার সকালে মৃতার বাবা বলেন, “অভিযুক্তদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।” এ দিন ধৃতকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, খাপ্রেলবাজার এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। বাবা ট্রলি চালান। মা পরিচারিকার কাজ করেন। অভাব-অনটনের মধ্যেই পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন। শনিবার বিকেলে বাড়ির সামনেই এক পরিচিতের সঙ্গে কথা বলছিলেন তরুণী। কিছু দূর থেকে তা দেখে পাড়ারই তিন যুবক। যুবকেরা মদ্যপ ছিল বলে অভিযোগ। হঠাৎই ওই তিন জন তরুণীর বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়িতে তখন তাঁর বাবাও ছিলেন। তরুণীটি কেন অন্য পাড়ার ছেলের সঙ্গে কথা বলছে, যুবকেরা তা জানতে চায়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে। অভিযোগ এক সময় ওই ছাত্রীর হাত ধরে টানারও চেষ্টা করে যুবকেরা। বাবা বাধা দিতে গেলে তিনিও প্রহৃত হন।

Advertisement

মৃতার পরিবার সূত্রে খবর, এই ঘটনার কিছু পরেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্ঠা করেন ওই তরুণী। বাড়িতে তখন কেউ ছিলেন না। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তরুণীর বাবা কোতয়ালি থানার পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানির চেষ্টা, গালিগালাজের অভিযোগ জানান। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যাতেই সুকুমার ভকত নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গণেশ ভকত-সহ বাকি দুই অভিযুক্ত এখনও পলাতক।

শনিবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে গিয়ে ওই তরুণীর জবানবন্দিও নেয় পুলিশ। গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় খাপ্রেলবাজার এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। রবিবার সকালে মৃতার বাবা বলছিলেন, “ওরা আগেও আমার মেয়েকে গালিগালাজ করেছে। শনিবার এক পরিচিতের সঙ্গে আমার মেয়ে কথা বলছিল। পরে ওরা বাড়িতে এসে হুমকি দেয়। সকলেই মদ খেয়েছিল। মেয়েকে হাত ধরে টানতে যাচ্ছিল। বাধা দিই। তখন ওরা আমাকে মারধরও করে।” ধরা গলায় কোনও রকমে তিনি বলেন, “এ সব সহ্য করতে না পেরেই মেয়ে গায়ে আগুন দেয়।”

সাম্প্রতিক অতীতে মেদিনীপুর শহরে এমন ঘটনা ঘটেনি। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন খাপ্রেলবাজার এলাকার বাসিন্দারাও। পুলিশও মনে করছে, বাবার সামনে পাড়ার যুবকদের কাছ থেকে অকথ্য গালিগালাজ শুনে অপমানিত হন ওই তরুণী। যুবকেরা তাঁর সম্পর্কে কটূ কথা বলায় মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েন তিনি। তার জেরেই মর্মান্তিক এই ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন