আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন-পর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, একই দিনে অর্থাৎ আগামী ২৯ জানুয়ারি হবে নির্বাচন। কলেজের ক্ষেত্রে মনোনয়নপর্ব চলবে ১৬ এবং ১৭ জানুয়ারি। দু’দিনই মনোনয়নপর্ব তোলা এবং জমা দেওয়া যাবে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে মনোনয়ন-পর্ব চলবে ১৬ থেকে ২১ জানুয়ারি (একদিন ছুটি রয়েছে)। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ হল ২০ এবং ২১ জানুয়ারি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সুষ্ঠু ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই করা হচ্ছে।
অবশ্য ইতিমধ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, অনেক কলেজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। টিএমসিপির কর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি সোমনাথ চন্দের কথায়, “এখন তো ছাত্র সংসদে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। জয় করার বদলে ছাত্র সংসদ দখল করা হয়।” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও টিএমসিপি কর্মীরা হুমকি দিচ্ছে। আসলে টিএমসিপি বুঝে গিয়েছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে পরাজয় নিশ্চিত।” ডিএসও-র জেলা সভাপতি দীপক পাত্রের কথায়, “একদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ অন্যায় আচরণ করছেন। অন্য দিকে টিএমসিপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।” বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) জেলা সভাপতি স্বরূপ মাইতি বলেন, “আসলে টিএমসিপি কর্মীরা ভয়ে পেতে শুরু করেছে। ভয় পাচ্ছে বলেই ওরা আমাদের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে।”
বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে টিএমসিপি। টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “সর্বত্রই সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। বাম আমলেই বরং বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হত না।” তাঁর দাবি, “সব কলেজেই যাতে বিরোধীরা মনোনয়ন তুলতে পারেন, কর্মীদের সেই নির্দেশই দিয়েছি। ছাত্রছাত্রীরা মনোনয়ন তুলুক। জমা দিক। কেউ বাধা দেবে না। তবে সঙ্গে গুণ্ডা নিয়ে এলে কর্মীরা তো বাধা দেবেই।”
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপর্ব ঘিরে প্রতি বছর ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে অশান্তি হয়। এক সময় যে সব কলেজে এসএফআইয়ের দাপট ছিল, এখন সেখানে টিএমসিপির দাপট রয়েছে। কয়েকটি কলেজে সিপির প্রভাব রয়েছে। ইদানীং আবার কয়েকটি কলেজে এবিভিপির প্রভাব বেড়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে অনভিপ্রেত ঘটনা সংখ্যা কমাতেই একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। এখন বিনা রক্তপাতে কলেজ ভোট হয় কি না, সেটাই দেখার।