একটানা ভারী বৃষ্টিতে অবশেষে স্বস্তিতে চাষিরা

ক’দিনের টানা ভারী বৃষ্টি হাসি ফেরাল পশ্চিম মেদিনীপুরের চাষিদের মুখে। দিন কয়েক আগেই প্রকৃতি অনুকূলে না থাকায় চলতি মরসুমে খারিফ চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল খোদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতর। কপালে ভাঁজ পড়েছিল চাষিদেরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:১৭
Share:

চাষের কাজে ব্যস্ত মহিলারা। মেদিনীপুরের পাঁচখুরিতে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

ক’দিনের টানা ভারী বৃষ্টি হাসি ফেরাল পশ্চিম মেদিনীপুরের চাষিদের মুখে। দিন কয়েক আগেই প্রকৃতি অনুকূলে না থাকায় চলতি মরসুমে খারিফ চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল খোদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতর। কপালে ভাঁজ পড়েছিল চাষিদেরও। কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। জেলায় গত সাত দিনে ২৫ শতাংশের বেশি জমিতে খারিফ চাষ রয়েছে। দফতর সূত্রে খবর, এখন জেলায় ৮০ শতাংশ জমিতে খারিফ চাষ রোওয়া হয়ে গিয়েছে। জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস আধিকারী বলেন, “ইতিমধ্যে জেলায় ৮০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ হয়ে গিয়েছে। এখনও জোর কদমে চাষ চলছে। এই রকম বৃষ্টি হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভবনা রয়েছে।”

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথমের দিকে জেলায় খারিফ চাষের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। সঙ্গে যে সব জমিতে ধান রোওয়া হয়েছিল-বৃষ্টির অভাবে সেই সব জমিও শুকিয়ে যেতে শুরু করেছিল। ফলে চিন্তায় ছিল কৃষি দফতর। কারণ, সরকারি নিয়মানুযায়ী ১৫ অগস্টের মধ্যে খারিফ চাষের রোওয়ার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ১৫ অগস্টের দিন কয়েক আগেও ৫০ শতাংশের বেশি কিছু জমিতে চাষ হয়নি। কিন্তু গত সাত দিনে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর ওই বৃষ্টিতেই চাষিরাও ধান রোওয়া সেরে ফেলেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত জুলাই মাস পযর্ন্ত জেলায় এখনও বৃষ্টির ঘাটতি ২৮ শতাংশ। এটা গত ২৯ বছরের বৃষ্টিপাতের গড় হিসাব। এখনও এই পরিসংখ্যান থাকলে তা অনেকটাই কমে যাবে বলে কৃষি দফতর সূত্রের খবর। কারণ, ওই হিসাব ছিল ৩১ জুলাই পযর্ন্ত। সাধারণত, মাস শেষ হলেই বৃষ্টিপাতের গড় হিসাব ঠিক হয়। তাই চলতি মাসের শেষের দিকে নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় ওই ঘাটতি অনেকটাই কমে যাবে। কারণ অগস্ট মাসে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২২১ মিলিমিটার।

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, খারিফ চাষ পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর। জুন মাস থেকেই এই চাষ শুরু হয়ে যায়। অনেক চাষিই দু’বার ধরে এই চাষ করেন। কিন্তু চলতি মরসুমে দু’বার দূরের কথা, বৃষ্টির অভাবে আদৌও ধান হবে কি না তা নিয়েই চিন্তায় ছিলেন চাষিরা। অথচ, জেলায় প্রায় নব্বই ভাগ চাষিই এই চাষের উপরই নির্ভর। তাই ঠিক সময়ে চাষ না হওয়ায় চালের দাম কত হবে-সেই চর্চাও চলছিল। তবে বৃ্ষ্টির ফলে খারিফ চাষ হওয়ায় আর সেই আশঙ্কা নেই।

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলার চাষযোগ্য ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ২১৮ হেক্টর জমির মধ্যে ৫ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে এবার খারিফ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লক্ষ ৩২ হাজার জমিতে ইতিমধ্যেই ধান রোওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ্মাট খারিফ চাষের টার্গেট নেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে। আর এখনও পর্যন্ত চাষ হয়েছে ৯০ শতাংশ জমিতে। মেদিনীপুর সদর মহকুমায় এবার ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৪৪ হেক্টরের মধ্যে মাত্র ৭৯ শতাংশ জমিতে চাষ হয়েছে। খড়্গপুর মহকুমায় এবার ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯২৩ হেক্টর জমিতে খারিফ চাষ হওয়ায় কথা। চাষ হয়েছে মাত্র ৬৬ শতাংশ জমিতে। আর ঘাটাল মহকুমায় চাষ হয় ৫৯ হাজার ৬৩২ হেক্টর জমিতে। রোওয়া হয়েছে একশো শতাংশ জমিতেই। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, চলতি মরসুমে জেলায় এখন পর্যন্ত এই চারটি মহকুমায় খারিফ চাষের এই চিত্র। চলতি মাসের শেষেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে বলে আশা কৃষি দফতরের। তবে মাঝে বৃষ্টি হওয়াটাও দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন