ওসি-আইসি বদলে অস্বস্তি লুকোতে মরিয়া তৃণমূল

জেলা পুলিশ সুপার, এক অতিরিক্ত জেলাশাসকের পর ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরেরই এক থানার আইসি এবং তিন থানার ওসিকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এমন নির্দেশে শাসকদল তৃণমূলের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে বলেই দলের এক সূত্রে খবর। যদিও নেতৃত্ব অস্বস্তির কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর ও এগরা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৩
Share:

জেলা পুলিশ সুপার, এক অতিরিক্ত জেলাশাসকের পর ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরেরই এক থানার আইসি এবং তিন থানার ওসিকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এমন নির্দেশে শাসকদল তৃণমূলের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে বলেই দলের এক সূত্রে খবর। যদিও নেতৃত্ব অস্বস্তির কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।

Advertisement

জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “এক অফিসার সরলে আরেক অফিসার আসবেন। তাতে আমাদের কী! পুলিশ কোনও দলের হয়ে কাজ করে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে। ফলে, আমাদের কিছু ক্ষতি হবে না।” এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মানুষের ভোটে জিতি। জেতার জন্য আমাদের সিপিএমের মতো রিগিং করতে হয় না!” তৃণমূলের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, এক ধাক্কায় চার পুলিশ অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ায় দলের মধ্যে অস্বস্তি যে বেড়েছে, তা বিলক্ষণ জানেন জেলা চেয়ারম্যানও।

বিরোধী শিবির অবশ্য কমিশনের এই পদক্ষেপে খুশি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ ঠিক বলেই মনে করি। আমরা চাই, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আশা করি, কমিশন সেই ব্যবস্থা করবে।” কংগ্রেস কী নির্দিষ্ট কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ছিল? বিকাশবাবু বলেন, “শুধু আমরা কেন? কয়েকটি এলাকায় কিছু পুলিশ অফিসারের কাজকর্ম নিয়ে অন্য দলের মধ্যেও অসন্তোষ ছিল। আমরা মনে করি, সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে কমিশন পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

Advertisement

সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা ঘাটালের বামপ্রার্থী সন্তোষ রাণা বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার, কমিশন করুক।” তিনি বলেন, “বেশ কিছু এলাকাতেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, দেখা গিয়েছে, যাঁরা আক্রান্ত, পুলিশ উল্টে তাঁদের নামেই মিথ্যে মামলা করেছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেশ কয়েক জন পুলিশ অফিসার তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানিয়ে আসছি।” তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য মনে করেন, কিছু ক্ষেত্রে কমিশন অতি-সক্রিয়তা দেখাচ্ছে।

পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে আগেই জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্তকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই দু’জনকে সরানো নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন থানার ২০ জন পুলিশ অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের চার জন রয়েছেন। কমিশনের কোপে পড়েছেন মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী, কেশপুর থানার ওসি দয়াময় মাঝি, চন্দ্রকোনা থানার ওসি আশিস জৈন এবং পিংলা থানার ওসি পঙ্কজ মিস্ত্রি।

বদলি হওয়া এই অফিসারদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পর্যবেক্ষকরাও কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন বলে এক সূত্রের দাবি। কেশপুর থানার ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অভিযোগ উঠছিল। গত মার্চে এক ঘটনায় পুলিশ সিপিএমের জোনাল কার্যালয় জামশেদ ভবন থেকে ২৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। সিপিএমের দাবি, মামলাটাই সাজানো। কেশপুরে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ আবার অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেই মামলা করে বলে অভিযোগ ওঠে।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশপুরের নামমাত্র আসনে বিরোধী প্রার্থী ছিল। বিরোধীদের দাবি, পুলিশ সেই সময়ও পক্ষপাতিত্ব করে। অভিযোগ উঠেছিল পিংলার ওসির বিরুদ্ধেও। তিনি শাসকদলের কথা মতো কাজ করেন বলে কমিশনে অভিযোগ জানায় বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি ছিল, পরবর্তী সময়ও ওসি নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। চন্দ্রকোনা থানা এলাকাতেও সিপিএমের উপর কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ সে ক্ষেত্রেও ঠিক পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। প্রায় একই ভাবে অভিযুক্ত ছিলেন কোতয়ালি থানার আইসিও।

কমিশন সূত্রে খবর, ভোটের কাজে যুক্ত কোনও সরকারি অফিসার ও কর্মীর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তদন্ত করে যাঁদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, শুধুমাত্র তাঁদেরই সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার আরও কয়েক জন অফিসারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর করছে কমিশন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদেরও সরানো হবে।

অপসারিত হয়েছেন এগরা ২-এর বিডিও মৃন্ময় মণ্ডলও। তবে তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে সিপিএমের পক্ষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত পণ্ডা বলেন, “ব্লকের নানা কাজে এগরা ২ বিডিওর কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা মিলত। কোনও কারণ ছাড়া হঠাৎ করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ায় আমরা অবাক হয়েছি।”

তবে, বিডিওকে সরানো নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে তৃণমূলেই। এগরার তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাসের বক্তব্য, “শুনেছি বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে মৃন্ময় মণ্ডলকে সরানো হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” এগরা ২ ব্লকের তৃণমূলের কনভেনর স্বরাজ খাঁড়া আবার বলেন, “দিন কুড়ি আগে এলাকার ৪০০ জনের স্বাক্ষর-সহ একটি অভিযোগ পত্র পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। হয়ত সে কারণেই তাঁকে সরানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন