কলকাতার হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে টুম্পা। সুদীপ্ত ভৌমিকের ছবি।
সহমর্মী, মানবিক পুলিশের এমন চেহারাই সামনে এল মেদিনীপুরে। বন্ধ কারখানার এক শ্রমিকের মেয়ের চিকিৎসার যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।
সাত মাস হল ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলানো হয়েছে মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়ার এক বেসরকারি সুতোকলে। এই কারখানার স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন শহরের কামারপাড়ার বাসিন্দা অসিত রায়। মাস গেলে হাতে পেতেন হাজার পাঁচেক টাকা। এই সাত মাসে রোজগারের আর কোনও সংস্থান করতে পারেননি বছর বিয়াল্লিশের অসিতবাবু। সঞ্চয়ও বিশেষ নেই। স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনো দশার মধ্যেই মেয়ে টুম্পা ফুসফুসের রোগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চলতি জানুয়ারিতে পুলিশের উদ্যোগে মেদিনীপুর শহরে এক স্বাস্থ্য শিবির হয়। সেখানেই প্রথম টুম্পার অসুখ ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী টুম্পার ফুসফুসে একটা ফুটো আছে। অসিতবাবুর কারখানা তখন বন্ধ। তাছাড়া টুম্পার শরীরে অসুস্থতার তেমন উপসর্গ দেখা না দেওয়ায় মেয়ের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা তখন আর করেননি অসিতবাবু। গত সপ্তাহে টুম্পা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা মেদিনীপুরোর উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের দ্বারস্থ হন অসিতবাবু। উপ-পুরপ্রধানের উদ্যোগে টুম্পাকে ভর্তি করানো হয় শহরের এক নার্সিংহোমে। চিকিৎসকেরা জানান, টুম্পার অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে বিপদ বাড়বে।
এর পরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে অসিতবাবুর। চিকিৎসার খরচ কয়েক লক্ষ টাকা! এত টাকা আসবে কোত্থেকে! অসিতবাবুর অসহায় অবস্থা দেখে গত বুধবার কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশীর কাছে যান উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবু। আইসি সব জানান পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে। ভারতীদেবীর তৎপরতায় বৃহস্পতিবারই টুম্পাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অসিতবাবু ও তাঁর স্ত্রী মুন্নিদেবীর সঙ্গে টুম্পাকে ভর্তি করাতে কলকাতায় যান কয়েক জন পুলিশকর্মীও। দিন কয়েকের মধ্যে ওই কিশোরীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।
ভারতীদেবীর কথায়, “সরকারি উদ্যোগেই ওর (টুম্পা) চিকিৎসা হবে। পরিবারকে বলেছি, চিন্তার কিছু নেই।” পুলিশের এই ভূমিকায় কৃতজ্ঞ অসিতবাবু। তিনি বলেন, “মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। পুলিশই মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। এই সাহায্য কখনও ভুলতে পারবো না।” টুম্পার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা হওয়ায় খুশি উপপুরপ্রধানও। তিনি বলেন, “ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভীষণ খারাপ। পুলিশ পাশে দাঁড়ানোয় খুবই ভাল হল।”