ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দ্বন্দ্ব মেটাতে এ বার আসরে নামল তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা নেতারা।
সোমবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে জখম হন চার জন। পরিস্থিতি দেখে ওই দিন রাতেই ছাত্র নেতাদের তলব করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। শহরের ফেডারেশন হলে প্রায় দু’ঘণ্টার ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ এবং আশিস চক্রবর্তী, পুরপ্রধান প্রণব বসু প্রমুখ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গোলমালের জন্য ছাত্র নেতাদের ধমকও দেন দীনেনবাবু, প্রদ্যোৎবাবুরা।
দলের এক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে তলব করা হয়েছিল দলের ছাত্র সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক বুদ্ধ মণ্ডল, শহর সভাপতি শৈবাল পাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ সরকার, টিএমসিপির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি প্রবীর আদক প্রমুখকে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গোলমালের জন্য ছাত্র নেতাদের ভর্ৎসনা করেন জেলা নেতৃত্ব। টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির কাছে দীনেনবাবু জানতে চান, “জেলার ২৬টি কলেজে সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়নপর্ব হয়ে গেল। সেখানে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে।” ওই সূত্রের দাবি, টিএমসিপির জেলা সভাপতি বৈঠকে স্বীকার করে নেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝামেলা মেটাতে তিনি অপারগ। বৈঠকে রমাপ্রসাদ বলেন, “২৬টি কলেজের মনোনয়নপর্ব সুষ্ঠু ভাবে সামলে নিয়েছি। চেষ্টা করেও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা মেটাতে পারিনি।”
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। ছাত্র সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে করতে কিছু দিন আগে দুই গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেন তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তারা। সমস্যার সমাধান হয়নি। আগামী ২৯ জানুয়ারি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন রয়েছে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপর্ব শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া। চলবে আজ, বুধবার পর্যন্ত।
মনোনয়নপর্বে বড় অশান্তি এড়াতেই তড়িঘড়ি ছাত্র নেতাদের তলব করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ছাত্র সংসদের দখল কার হাতে থাকবে, মূলত সেই নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। দীর্ঘ আলোচনার পর তৃণমূল নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন, গত বছর প্রথম বর্ষে যাঁরা প্রার্থী হয়েছিল, এ বছর দ্বিতীয় বর্ষে তাঁরাই প্রার্থী হবেন। অন্যদিকে, প্রথম বর্ষের প্রার্থী তালিকা আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক হবে। এ জন্য বৈঠক থেকেই একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়।
দলের এক সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে ওই কমিটির সদস্যদেরও আলোচনা হয়। এরপরই টিএমসিপির তরফে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হয়। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একের পর এক ঘটনা ঘটবে, আর তার জন্য দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে! আশা করি, এ বার টিএমসিপির একটাই প্যানেল থাকবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভুল বোঝাবুঝির কোনও প্রভাবই পড়বে না।”
অবশ্য দলের গোষ্ঠী-কোন্দলের কথা মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বৈঠক শেষে দীনেন রায় বলেন, “ছাত্র সংগঠনে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।” তাহলে কেন ছাত্র নেতাদের তলব করে তড়িঘড়ি বৈঠক করতে হল? জেলা সভাপতির ব্যাখ্যা, “একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আলোচনার মাধ্যমে তা মিটে গেছে।” একই দাবি টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির। রমাপ্রসাদ বলেন, “এখন সব কিছু ঠিকই আছে।”