কেশপুরে বাম-কংগ্রেস সৌজন্য, তলে তলে জোট বলছে তৃণমূল

সকাল থেকেই সারা কেশপুর চষে বেড়াচ্ছেন মানস ভুঁইয়া। আর বলছেন, “উন্নয়ন তো বটেই, সকলের আগে কেশপুর হোক শান্তি নিকেতন। যিনি যে দলের, যে মতের মানুষই হন না কেন, চাই সৌজন্য।” সোমবারের প্রচারে এই বার্তা দিতে দিতেই আনন্দপুর, কানাশোল, কেশপুর হয়ে মানসবাবু পৌঁছে যান ঝলকা। চৈত্র শেষের চড়া রোদে গা পুড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৬
Share:

হাতে হাত। সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দলুইয়ের সঙ্গে মানস। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

সকাল থেকেই সারা কেশপুর চষে বেড়াচ্ছেন মানস ভুঁইয়া। আর বলছেন, “উন্নয়ন তো বটেই, সকলের আগে কেশপুর হোক শান্তি নিকেতন। যিনি যে দলের, যে মতের মানুষই হন না কেন, চাই সৌজন্য।”

Advertisement

সোমবারের প্রচারে এই বার্তা দিতে দিতেই আনন্দপুর, কানাশোল, কেশপুর হয়ে মানসবাবু পৌঁছে যান ঝলকা। চৈত্র শেষের চড়া রোদে গা পুড়ছে। গলদঘর্ম অবস্থাতেই এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন ঘাটাল কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী। সঙ্গে একদল কর্মী-সমর্থক। সাধারণ লোকের ভিড়ও ছিল যথেষ্টই। এই পথেই কেশপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলই। রাস্তায় যানজট থাকায় গাড়ির গতি ছিল কম। গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লেন রামেশ্বরবাবু। এগিয়ে গেলেন মানসবাবুর দিকে। কুশল বিনিময় করলেন প্রতিপক্ষ দলের দুই নেতা। তারপর হাত মেলালেন। কংগ্রেস কর্মীরা রামেশ্বরবাবুর হাতে গুঁজে দিলেন দলীয় ইস্তেহার। সিপিএম বিধায়ক বললেন, “বাড়ি গিয়ে পড়ে দেখব।”

রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সব চোখ তখন মানস-রামেশ্বর মিলন দেখছে। কেশপুর সচরাচর এমন সৌজন্য দেখতে অভ্যস্ত নয়। তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে আসা মহম্মদ রফিকও হতবাক। তাঁর কথায়, “এ ঘটনা অন্য সব জায়গায় ঘটে। সব দলের নেতাদেরই এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।” কেশপুর মানেই রাজনৈতিক খুন, সংঘর্ষ, মারামারি। ১৯৯৮ থেকে ২০০১, এই কালপর্বে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা বারবার উত্তপ্ত হয়েছে। বহু বাড়ি পুড়েছে, খুন-শ্লীলতাহানি-ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ভুরি ভুরি। ওই পর্বে বিরোধীরা এলাকায় সভা-সমাবেশ করতে গেলে অত্যাচারের অভিযোগও উঠত। এখান পালাবদল হয়েছে। তবে কেশপুরে মারামারি থামেনি। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক শত্রুতা ভুলে এহেন সৌজন্য কেশপুরে সত্যিই বিরল। মানসবাবুর মতে, “কেশপুর পিছিয়ে পড়া। তফসিলি ও সংখ্যালঘু মানুষের বাস বেশি। ঘন ঘন সংঘর্ষ, হানাহানিতে ব্যাহত হয়েছে এলাকার উন্নয়ন। আমার প্রথম কাজ হবে কেশপুরে শান্তি ফেরানো।”

Advertisement

তৃণমূল অবশ্য এই সৌজন্যের পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছে। দলীয়ভাবে কেশপুর ব্লকে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের জেলা নেতা আশিস চক্রবর্তী বলেন, “বাইরের থেকে এটাকে অনেকেই সৌজন্য বলে ভাবতে পারেন। আসলে তা নয়। ওদের তলে তলে জোট হয়েছে। আমরাও চাই সকলের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাক। কিন্তু এই সিপিএমই তো কেশপুরে কংগ্রেসকে বারবার আক্রমণ করেছে।” সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বরবাবু অবশ্য বলেন, “এই সৌজন্যের রাজনীতিই তো কাম্য। মানসবাবু, জ্ঞানসিংহ সোহনপালের মতো প্রবীণ ব্যক্তিত্বের কাছে অনেক কিছু জানার আছে। প্রবীণ হিসাবেই ওঁদের সম্মান জানাই। কেউ যদি এর মধ্যে অন্য কিছু খুঁজতে চান, তাহলে ঠিক হবে না।” মানসবাবুরও বক্তব্য, তৃণমূলের অভিযোগ ঠিক নয়। ঘাটালের বামপ্রার্থী সন্তোষ রাণার বাড়িতে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেবের যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ওদের প্রার্থী গেলে সেটা সৌজন্য, আর আমাদের বেলায় তলে তলে জোট!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন