হাঁটু জলেই বিসর্জন। শনিবার মেদিনীপুরে কংসাবতী নদীতে। —নিজস্ব চিত্র।
গতবারের থেকে এ বার বৃষ্টি কম হয়েছে। তার প্রভাব পড়ল প্রতিমার বিসর্জনেও। কাঁসাই নদীর গাঁধীঘাটেই প্রতিমা বিসর্জন হয়। এ বার নদীতে জল কম থাকায় সমস্যায় পড়লেন মেদিনীপুরের অধিকাংশ পুজো উদ্যোক্তা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হল পুর- কর্তৃপক্ষকেও। নদীঘাটের পাশে মাটি খুঁড়ে সেখানে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। রাখতে হয় ক্রেনও। প্রতিমা বিসর্জনের পরপরই ক্রেন দিয়ে কাঠামো সরিয়ে নেওয়া হয়।
দশমীতেই কোতোয়ালিবাজার সর্বজনীনের প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা কৌশিক পালের কথায়, “নদীঘাটের কাছে জলই নেই। বিসর্জন দিতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। মাটি খুঁড়ে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে ঠিকই তবে সেখানে বড় প্রতিমা ভাসানো কঠিন। আমাদের ছোট প্রতিমা ছিল। তাই তেমন সমস্যা হয়নি। অনেকে তো শোভাযাত্রা নিয়ে নদীঘাটে গিয়েও প্রতিমা ফিরিয়ে এনে স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন দিয়েছে।”
সমস্যা মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষও। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “এ বার নদীতে জল কম রয়েছে। তাই কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে পুরসভার পক্ষ থেকে যা যা পদক্ষেপ করার সবই করা হয়েছে।” শহরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “নদীতে জল কম থাকলে সমস্যা হবেই। উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থেই ক্রেনের ব্যবস্থা হয়েছে।”
মেদিনীপুর শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে কাঁসাই। নদীর একদিকে মেদিনীপুর শহর, অন্য দিকে খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকা। কিছু দূরে রেলশহর খড়্গপুর। মেদিনীপুর শহরের অধিকাংশ প্রতিমাই কাঁসাই নদীতে বিসর্জন হয়। এ জন্য পুর-কর্তৃপক্ষ সব রকম ব্যবস্থাও করেন। গাঁধীঘাটে আলোরও ব্যবস্থা করা হয়। শিবির করে পুরকর্মীরা থাকেন। প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দশমীর দিন দুপুরেই এলাকায় যান পুরপ্রধান, উপ পুরপ্রধান প্রমুখ। তবে এ বার নদীর পরিস্থিতি ছিল অন্যবারের থেকে আলাদা। ঘাট থেকে জলস্রোতের ফারাক ছিল অনেকটাই। পরিস্থিতি দেখে ঘাটের পাশে মাটি খুঁড়ে সেখানে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। পুজো উদ্যোক্তারা এখানেই প্রতিমা বিসর্জন দেন। পরে ক্রেন দিয়ে কাঠামো সরিয়ে নেওয়া হয়। মেদিনীপুর শহর এবং শহরতলিতে শতাধিক দুর্গাপুজো হয়। অধিকাংশ প্রতিমা দশমীর দিনই বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। আজ, সোমবার রাতে কয়েকটি প্রতিমা বিসর্জন হওয়ার কথা। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “পুজো নির্বিঘ্নে কেটেছে। আশা করি, বিসর্জন পর্বও নির্বিঘ্নে কাটবে।”
কাঁসাই নদী বৃষ্টির জলে পুষ্ট। ফলে, বর্ষা ছাড়া বছরের অন্য সময় নদীর জলস্তর নামতে থাকে। গরমে অনেক এলাকায় জল শুকিয়েও যায়। কম বৃষ্টি হলে তার প্রভাব পড়ে কৃষিকাজে। এ বার নদীতে জল কম থাকায় সমস্যা হল বিসর্জনেও। শহরের গাঁধীঘাট এলাকার কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নদীঘাটের কাছে জলস্রোত নেই বললেই চলে। কিছু দূরে এক হাঁটু সমান জল রয়েছে। জল কম থাকলে কিছু সমস্যা হবেই। দু’বছর আগেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। তবে সকলের সহযোগিতায় বিসর্জন পর্ব সুষ্ঠু ভাবেই চলছে।”
বিসর্জন ঘিরে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রতি বছরের মতো এ বারও শহরের গোলকুয়াচকে পুরসভার পক্ষ থেকে অস্থায়ী অফিস খোলা হয়েছে। শহরের অধিকাংশ পুজো কমিটি এই এলাকার উপর দিয়েই বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে যান। গোলকুয়াচক ও তার আশপাশেও পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।