কঠিন লড়াই, চড়া রোদেই চষছেন তিন বারের সাংসদ

তপ্ত দুপুর। করঞ্জি পেরিয়ে মিছিল কিছুটা এগোনোর পর একটা বটগাছের তলায় বসে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছিলেন প্রার্থী। দলের এক কর্মী জলের বোতল বাড়িয়ে দিলেন। গলা ভিজিয়ে তিনবারের সাংসদ গল্প জুড়লেন কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে। চাষ কেমন হয়েছে, ফসলের দাম পাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলেন।

Advertisement

বরুণ দে

কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৩
Share:

প্রচারের ফাঁকে কেশিয়াড়ির করঞ্জিতে জিরিয়ে নিচ্ছেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

তপ্ত দুপুর। করঞ্জি পেরিয়ে মিছিল কিছুটা এগোনোর পর একটা বটগাছের তলায় বসে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছিলেন প্রার্থী। দলের এক কর্মী জলের বোতল বাড়িয়ে দিলেন। গলা ভিজিয়ে তিনবারের সাংসদ গল্প জুড়লেন কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে। চাষ কেমন হয়েছে, ফসলের দাম পাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলেন।

Advertisement

মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধ রামচন্দ্র জানা। প্রার্থী এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আমি প্রবোধ পণ্ডা। এ বারও ভোটে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের সমর্থন চাই। ভোটটা কিন্তু কাস্তে-ধান শিসেই দিতে হবে।” প্রবোধবাবুর হাতে হাত রেখে বৃদ্ধের জবাব, “আপনাকে চিনি। তাই তো দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লাম।।”

রবিবার দিনভর চড়া রোদ আর গরমের মধ্যেই কেশিয়াড়িতে প্রচার চালালেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা। রোদ মাথায় ঘুরতে হচ্ছে। তাই বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে পান্তা খেয়ে নিচ্ছেন প্রবোধবাবু। সঙ্গে পেঁয়াজ আর শাকভাজা। দুপুরের খাওয়াটা কোনও কর্মীর বাড়িতে সারছেন। আর রাতে বাড়ি ফিরে ডাল-ভাত। পোশাকও গরমের সঙ্গে মানানসই। সুতির প্যান্ট, হাফ শার্ট এবং অবশ্য মাথায় টুপি। প্রবোধবাবু বলেন, “বরাবর এই সময় লোকসভার ভোট হয়। রোদটা চড়াই থাকে। তাই টুপিটা সঙ্গে রাখি। আর ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস আছে। অসুবিধা হয় না।”

Advertisement

মেদিনীপুর থেকে কেশিয়াড়ির দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। আরও কিছুটা এগোলে নছিপুর। তারপর ডানদিকের মোরাম রাস্তা ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় করঞ্জি। এ দিন এখান থেকেই বামপ্রার্থীর সমর্থনে মিছিল শুরু হয়। প্রবোধবাবুর প্রচারসঙ্গী স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক বিরাম মাণ্ডি বলছিলেন, “আমরা প্রবোধদার উপর অত্যাচারই করছি! কর্মী-সমর্থকেরা সকলে চাইছেন, দাদাও হেঁটে মিছিলে ঘুরুন। প্রবোধদারও দেখছি কোনও ক্লান্তি নেই।” করঞ্জি থেকে শুরু হওয়া মিছিল শেষ হয় উত্তর ডোম্বুরকোলায় এসে। দূরত্ব ৬ কিলোমিটার।

মেদিনীপুরে এ বার কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি প্রবোধবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। তার উপর মেদিনীপুর লোকসভার মধ্যে যে ৭টা বিধানসভা (দাঁতন, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর সদর, খড়্গপুর, নারায়ণগড়, মেদিনীপুর এবং এগরা) রয়েছে, গত পঞ্চায়েত ভোটে সেখানে একটিও পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে পারেনি বামেরা।

২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রবোধবাবু ৪৮০১৭ ভোটে জিতেছিলেন। সিপিআই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট যেখানে ছিল ৪৯৩০২১, সেখানে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪৪৫০০৪ ভোট। বিজেপি সে বার ৫০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছিল। ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ছিল। এ বার অবশ্য চতুর্মুখী লড়াই হচ্ছে। ফলে, ভোট ভাগাভাগি হবে। এতেই আশার আলো দেখছে বাম- শিবির। আর হেভিওয়েট তারকা প্রার্থীকে নিয়ে বিশেষ ভাবছেন না প্রবোধবাবু। মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ মেঠো পথের মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “অভিনেত্রী যদি রাজনীতিতে এসে হেভিওয়েট হয়ে যান, তাহলে আমিও অভিনয়ে করতে গেলে হেভিওয়েট হয়ে যাব!” খানিক থেমে প্রবোধবাবু বলেন, “শুনেছি, প্রচারে গিয়ে উনি (সন্ধ্যা রায়) নিজের সিনেমার কথা বলছেন। এ-ও বলেছেন, রাজনীতিতে আসতে চাননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবাসেন বলে তাঁর ডাকে চুপ করে থাকতে পারেননি। লোকসভার ভোট তো ব্যক্তির লড়াই নয়, নীতির লড়াই। আমরা দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে সেই নীতির কথা বলছি।”

প্রার্থী না মানলেও বাম নেতা-কর্মীরা কিন্তু আড়ালে বলছেন, চাপ এ বার একটু বেশি। প্রবোধবাবু নিজেও তা বিলক্ষণ জানেন। আর জানেন বলেই চরকির মতো নিজের নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। রোজ সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন, ফিরতে ফিরতে সেই রাত ন’টা। এখন এটাই বামপ্রার্থীর রোজকার রুটিন।

এ দিন বামপ্রার্থীর সমর্থনে মিছিল যখন উত্তর ডোম্বুরকোলায় পৌঁছলো, তখন পড়ন্ত দুপুর। মাদলের তালে নাচছেন কয়েকজন যুবক। প্রবোধবাবু বলছিলেন, “গতকাল নারায়ণগড়ের কয়েকটা এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানেও এই একই উচ্ছ্বাস- উন্মাদনা। কয়েকশো মানুষ মিছিলে হেঁটেছেন।”

সন্ধ্যা রায়ের প্রচারেও কিন্তু ভিড় হচ্ছে? গাড়িতে ওঠার আগে হাসলেন বামপ্রার্থী। মেদিনীপুরের মিছিলে যোগ দিতে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “সিনেমা-স্টারদের দেখতে তো ভিড় হয়ই। ”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন