কবে মাধ্যমিক পরীক্ষা, উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে রেখা

পরীক্ষা হবে। কিন্তু কবে? এই প্রশ্ন নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে রেখা জানা। বন্ধুদের চিন্তা মাধ্যমিকের ফল নিয়ে। কেবল তার চিন্তা, পরীক্ষা কবে দিতে পারবে? মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের জুখিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেখা জানা। সে দিনই জখম পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরীক্ষার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ পালন করা হবে, ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রীও।

Advertisement

সুব্রত গুহ

ভূপতিনগর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

বিমর্ষ রেখা। ছবি: সোহম গুহ।

পরীক্ষা হবে। কিন্তু কবে?

Advertisement

এই প্রশ্ন নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে রেখা জানা। বন্ধুদের চিন্তা মাধ্যমিকের ফল নিয়ে। কেবল তার চিন্তা, পরীক্ষা কবে দিতে পারবে?

মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের জুখিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেখা জানা। সে দিনই জখম পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরীক্ষার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ পালন করা হবে, ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রীও। কিন্তু কবে পরীক্ষা হবে জখম পরীক্ষার্থীদের, উত্তর মেলেনি।

Advertisement

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষা বছরে একবারই হয়। অসুস্থ বা জখম পড়ুয়াদের জন্য আলাদা করে পরীক্ষা, ফল প্রকাশ করার কোনও দৃষ্টান্ত নেই। কিন্তু এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন নানা দুর্ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রীরা জখম হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দেন, এদের এ বছরই আবার পরীক্ষা নেওয়া হবে। কী করে তা সম্ভব, প্রশাসনের কোনও তরফ থেকে তখন তার কোনও উত্তর মেলেনি। এখন সেই উত্তর খুঁজছে রেখার মতো ছাত্র-ছাত্রীরা। মধ্য শিক্ষা পর্ষদের কর্তাদের বক্তব্য, সব জখম পড়ুয়া সুস্থ হলে পরীক্ষার দিন ঠিক হবে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের জুখিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেখা-সহ দশ পরীক্ষার্থী গাড়ি ভাড়া করে ইতিহাস পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল গ্রাম থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে, কৃষ্ণনগর মণীন্দ্রনাথ হাই স্কুলে। খেজুরির জরানগরে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় রেখা-সহ ১০ পরীক্ষার্থীই। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল গাড়ি চালক নন্দন সাউয়ের। জখমদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় স্থানীয় হেঁড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জখম নয় পরীক্ষার্থীর ‘বিশেষ’ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু মাথায় পিছনের হাড় ও মেরুদণ্ডে চিড় ধরা পড়ায় আর পরীক্ষায় বসার সুযোগ হয়নি রেখার।

২৮ ফেব্রুয়ারিই দুপুরে নবান্ন থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন জখম পড়ুয়ারা সুস্থ হলে আলাদা করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী এই বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে দেখার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও সেদিন বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আমরা অবশ্যই পালন করব।”

আট দিন কাঁথি হাসপাতালে থাকার পর বাড়িতে ফিরে এসেছিল রেখা। আরও দিন পনেরোর বিশ্রামে সে সুস্থ হয়। এরপরই পরীক্ষা দেওয়ার দিন কবে জানতে রেখা বারবার গিয়েছে তার স্কুলে। কিন্তু জুখিয়া কুঙরনারায়ণ বিদ্যাপীঠের তরফ থেকে মেলেনি কোনও সদুত্তর। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমলেশ গিরি বলেন, “স্কুলের পক্ষ থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদে বারবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। রেখা সুস্থ হয়েই আমাদের কাছে পরীক্ষার দিনের বিষয়ে জানতে এসেছিল। আমরা তাকে কোনও উত্তর দিতে পারিনি।”

রেখার বাবা গৌরহরি জানা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে কিছুটা ভরসা পেয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে মেয়ের ভবিষ্যৎ না নষ্ট হয়ে যায়।” রেখার এক সম্পর্কিত কাকা বাপন জানা বলেন, “মেয়েটা সারা দিন বই মুখে করে বসে থাকে আর কান্নাকাটি করে। আর রোজ বলে, আজ নিশ্চয়ই কিছু একটা খবর পাব। কিন্তু কই, কোনও খবরই তো এল না।”

সুস্থ হওয়ার পরও কেন পরীক্ষা দিতে পারছে না রেখা? মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধায় বলেন, “জখম পরীক্ষার্থীদের বিশেষ পরীক্ষা নেবে শিক্ষা দফতর। রাজ্যে দুর্ঘটনায় জখম ১৯ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে। এদের অনেকেই এখনও সুস্থ হয়নি। প্রত্যেকের তো আলাদা করে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। তাই পরীক্ষার দিন এখনও ঠিক হয়নি।” কিন্তু যদি সবাই সুস্থ হতে অনেক দেরি হয়, তাহলে রেখার মতো সুস্থ হয়ে-যাওয়া পরীক্ষার্থীরা কী করবে? উত্তর মেলার আগেই লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন