কর্মী-পরিদর্শকের অভাব, পশ্চিমে ধুঁকছে অঙ্গনওয়াড়ি

পড়ানোর দায়িত্ব একজনেরর। রান্নার দায়িত্ব আর একজনের। কিন্তু কর্মীর অভাবে সব মিলেমিশে একাকার। পর্যাপ্ত আধিকারিক নেই, নেই যথেষ্ট সংখ্যক কর্মীও। এমনই বেহাল দশা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির।

Advertisement

অভিজিত্‌ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০০:১৫
Share:

দাসপুরের কুঞ্জপুর উত্তরপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চলছে পড়াশোনা।—নিজস্ব চিত্র।

পড়ানোর দায়িত্ব একজনেরর। রান্নার দায়িত্ব আর একজনের। কিন্তু কর্মীর অভাবে সব মিলেমিশে একাকার। পর্যাপ্ত আধিকারিক নেই, নেই যথেষ্ট সংখ্যক কর্মীও। এমনই বেহাল দশা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির। সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলা প্রোগ্রাম অফিসার অসিতবরণ মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি দফতরের উধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রীসকলেই জানেন। যাতে প্রয়োজনীয় অফিসার ও কর্মী নিয়োগ করা হয়, তার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে।”

Advertisement

প্রসূতি, সদ্য মা ও ৬ বছর পর্যন্ত শিশুদের পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা, সমাজ সচেতনতা ও টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে দেশ জুড়ে অঙ্গনওয়াড়ি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে প্রত্যন্ত এলাকায় কোণে-কোণে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রকল্প। বিভাগটি দেখভালের জন্য ব্লকে-ব্লকে সিডিপিও অফিসার রয়েছেন। আর প্রতি কেন্দ্রে নজরদারি চালানোর জন্য রয়েছেন সুপারভাইজার। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা ও কর্মীরা কেমন ভাবে প্রকল্পটি চালাচ্ছেন-তা কেন্দ্রে গিয়ে দেখার কথা সুপারভাইজারদের। তাঁরা সরেজমিনে দেখে ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিডিপিওকে রিপোর্ট দেন। কিন্তু তথ্য বলছে, জেলায় ৩১ জন সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) থাকার কথা যেখানে, সেখানে রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। ফলে এক এক জন সিডিপিওকে একাধিক ব্লকের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। অন্য দিকে জেলায় অনুমোদিত ৩৯৩টি সুপারভাইজার পদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১২৫ জন। ফলে শুধু নজরদারিই নয়, স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিবির বা অন্যান্য কাজগুলিও ঠিকভাবে হচ্ছে না। নিয়মানুযায়ী, একজন সুপারভাইজার ২০-২৫টি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকেন। মাসে ২০ দিন তাঁরা নজরদারি চালান। কিন্তু এখন যা অবস্থা, তাতে একজন সুপারভাইজার ২৫টি কেন্দ্রের জায়গায় ৭৫-৮০টি কেন্দ্রের দায়িত্বে। এর থেকেই পরিষ্কার নজরদারি ঠিকভাবে হচ্ছে না।

দাসপুরের কুঞ্জপুর উত্তরপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কথাই ধরা যাক। এখানে বাঁশের বেত দিয়ে ঘেরা ত্রিপলের ছাউনিতেই চলছে কেন্দ্র। খোলা জায়গাতে রান্না হচ্ছে। নেই শৌচাগারের ব্যবস্থাও। এই অঙ্গনওয়াড়ির পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারাও। কুঞ্জপুরের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দোলই বলেন, “নিজস্ব ঘর নেই। নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবিরও হয় না। নামেই অঙ্গনওয়াড়ি। তেমন কোনও পরিষেবা তো মেলে না।” ঘাটালের দাদপুরের বিষইপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ছবিটাও প্রায় একই। এখানে বহুদিন ধরে কোনও কর্মী নেই। কাজ চালাতে এখানে ভরসা সহায়িকারাই। নিজস্ব ঘর তৈরির কাজ হওয়ায় এখনও কেন্দ্রটি চলছে স্থানীয় আটচালায়, রান্না হয় খোলা আকাশের নীচেই। এখানে পড়ানোর জন্য কর্মী না থাকায় পড়াশোনা হয় না বললেই চলে। অথচ মা এবং শিশু নিয়ে বেনিফিসারির সংখ্যাও প্রায় ৫০। সহায়িকা ছায়া মাঝির কথায়, “কর্মী না থাকায় নিয়মিত টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা সঙ্গে স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা কম হয়। প্রতিদিন কয়েকজন শিশু আসে। বাকি সবাই খাবারের সময় হলে বাড়ি থেকে টিফিন বক্স নিয়ে খাবার নিয়ে চলে যায়। এই ভাবেই চলছে।” ওই কেন্দ্রের সুপারভাইজার তপতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি ৫০টি কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছি। কাজ সেরে নিয়মিত পরিদর্শনে যাওয়া হয়ে ওঠে না। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

Advertisement

অবশ্য সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকাও নেই। সপ্তাহে ৬ দিন প্রসূতি এবং শিশুদের অক্ষর পরিচয়-সহ নানান কাজের দায়িত্ব থাকে সহায়িকাদের উপর। ৬ বছরের পর ওই শিশুদের নিকটবর্তী স্কুলে ভর্তি করাটাও তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সর্বস্তরে কর্মীর অভাব থাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই প্রকল্পটি তার এই সমস্ত লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। তার উপরে জেলায় ৯০০৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে নিজস্ব ভবন রয়েছে ৩ হাজার ৮০০টির। সরকারি অফিসে চলছে ৪৮০টি কেন্দ্র। ব্যক্তিগত বাড়ি ও ক্লাবে চলছে প্রায় ২০০০টি কেন্দ্র। বাকিগুলি চলছে আটচালায় কিংবা গাছের তলায়। অসিতবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “বহু কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন তৈরির কাজ চলছে। ২০১৬ সালের মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর তৈরি হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন