কর্মবিরতি, অচলাবস্থা তমলুক জেলা আদালতে

জেলা আদালতের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবী ও মুহুরিরা। কর্মবিরতির জেরে জেলা আদালতের অধিকাংশ এজলাসে অচলাবস্থা তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন মামলায় বাদী ও বিবাদী পক্ষ-সহ বিভিন্ন কাজে আদালতে আসা সাধারণ মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৩
Share:

বিচারককে ঘিরে বিক্ষোভ আইনজীবীদের। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

জেলা আদালতের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবী ও মুহুরিরা। কর্মবিরতির জেরে জেলা আদালতের অধিকাংশ এজলাসে অচলাবস্থা তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন মামলায় বাদী ও বিবাদী পক্ষ-সহ বিভিন্ন কাজে আদালতে আসা সাধারণ মানুষ। পূর্ব মেদিনীপুর ডিসট্রিক্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক যুগল মেটলা বলেন, “জেলা আদালতে সার্বিক কর্মবিরতির আগে গত ২২ অগস্ট থেকে জেলা আদালতের বিচারকের এজলাসে মামলায় শুনানিতে যোগ না দিয়ে প্রতীকী আন্দোলন চলছিল। এ বিষয়ে জেলা বিচারকের কাছ থেকে সদর্থক পদক্ষেপ না করায় সার্বিকভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন শুরু করা হয়েছে।”

Advertisement

কিন্তু কী কারণে এই বিক্ষোভ?

যুগলবাবুর অভিযোগ, জেলা আদালতের বিচারকের ক্ষমতানুসারে তাঁর নিজের আওতাধীন এই জেলার সমস্ত মামলা শোনার কথা। ২০০২ সালে নতুন জেলা গঠনের পর থেকে ২০১৪ সালের অগস্ট পর্যন্ত এটাই হয়ে আসছিল। কিন্তু ওই সময় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের বিচারকের মৌখিক নির্দেশের ফলে তমলুক সদর মহকুমার বাইরের এলাকার বাসিন্দাদের বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা, মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা জনিত মামলা, আগাম জামিনের আবেদন সংক্রান্ত মামলা জেলা আদালতের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট মহকুমা আদালতে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে জেলা আদালতের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। আইনজীবীদের পাশাপাশি জেলা আদালতের মুহুরিরাও এ দিন কর্মবিরতি শুরু করেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল ল-ক্লারক অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাখার সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “‘নতুন নিয়মের ফলে জেলা আদালতে মামলার সংখ্যা কমে যাবে। আর তাতে আমাদের রুজিতে টান পড়বে।”

Advertisement

এ দিন বিচারকরা গাড়িতে করে পৌঁছানোর পর আদালতের ভিতরে ঢুকতে গেলে ফৌজদারি আদালতের প্রবেশ পথের লোহার দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এর ফলে জেলা আদালত চত্বরে উত্তেজনা তৈরি হয়। এমনকি বিক্ষোভের জেরে ফৌজদারি আদালতে কাজে যোগ দেওয়া কর্মীদেরও বেরিয়ে যেতে হয়। একটি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বুধবার গ্রেফতার হয়েছিলেন ময়নার দোনাচক গ্রামের সুশান্ত পাড়ই। তাঁকে এ দিন তমলুক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলার কথা ছিল। সুশান্তর জামিনের আবেদনের জন্য আদালতে এসেছিলেন শ্বশুর শুকদেব বর্মণ। কোর্ট লক-আপের সামনে অপেক্ষা করা শুকদেববাবু বলেন, “আদালতে জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানি হলে জামিনে জামাই ছাড়া পেয়ে যেত। এই ঝামেলার জেরে তো কোনও কাজই হল না।” নন্দকুমারের বরগোদা গ্রামের অলক মণ্ডল এসেছিলেন একটি হলফনামা তৈরি করতে। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “জাতিগত শংসাপত্র পেতে ওই হলফনামা জমা দিতে হবে। কিন্তু আদালতে এসে জানতে পারলমা আজ কাজ হবে না।”

যদিও পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক যুগল মেটলার দাবি, “সাময়িকভাবে কিছুটা অসুবিধা হলেও জেলা আদালতের মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের এই আন্দোলনের ফলে জেলাবাসীরও উপকার হবে।” এ দিকে বৃহস্পতিবার জেলা আদালতে আইনজীবী ও মুহুরিদের কর্মবিরতি আন্দোলনের সময় যেভাবে আদালতে বিচারক ও কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা আদালত কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, আইনজীবীরা গতকাল লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন তাঁরা আদালতে মামলায় যোগ দেবেন না। কিন্তু আজ আইনজীবীরা আদালতে বিচারক ও কর্মীদের ঢুকতে বাধা দিয়েছেন। এটা আইনত একেবারেই করা যায় না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন