খাবার দোকানের কর্মী বিমল মাহাতোর মৃত্যুর পরে এ বার মারধরের মামলায় খুনের ধারা প্রয়োগের জন্য আদালতে আবেদন জানাল পুলিশ। শনিবার ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালতে ওই মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা যুক্ত করার জন্য পুলিশের তরফে আবেদন জানানো হয়। আজ, সোমবার পুলিশের ওই আবেদনের শুনানি হবে আদালতে।
তবে পুলিশের এই ধারা প্রয়োগের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী মহলের একাংশ। আইনজীবী মহলের বক্তব্য, পুলিশ প্রথমে সাধারণ মারধরের ধারায় মামলা রুজু করেছিল। ফলে, এখন জখম ব্যক্তির মৃত্যুর পর আইনের বিধান অনুযায়ী এই মামলায় অনিচ্ছাকৃত খুন (৩০৪ ধারা) প্রয়োগ করাই যুক্তিযুক্ত। গত শুক্রবার বিমলবাবুর আইনজীবী দেবনাথ চৌধুরী আদালতে বিমলবাবুর মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে মামলায় ৩০৪ ধারা প্রয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার পুলিশ এ বিষয়ে আদালতে কিছু না জানানোয় দেবনাথবাবুর আবেদনের শুনানি হয়নি।
এ দিকে শনিবার সংবাদমাধ্যমে বিমলবাবুর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। এরপরই তড়িঘড়ি তদন্তকারী অফিসার শনিবার মামলায় ৩০২ ধারা প্রয়োগের আবেদন জানান। মৃত বিমলবাবুর পরিবারের আইনজীবী দেবনাথ চৌধুরীর বক্তব্য, “মামলাটি যদি খুনের চেষ্টার ধারায় (৩০৭) দায়ের হত, তাহলে আহত ব্যক্তির মৃত্যুর পরে খুনের ধারা প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত হত। কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশ প্রথমে জামিনযোগ্য মারধরের ধারায় মামলা রুজু করেছে। অর্থাৎ, অভিযুক্তরা খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে মারধর করেনি।”
দেবনাথবাবুর অভিযোগ, “এখন খুনের ধারা যোগ করে পুলিশ অভিযুক্তদেরই স্বার্থরক্ষা করতে চাইছে। কারণ, এই মামলায় যদি খুনের ধারা (৩০২) দেওয়া হয়, তাহলে তা প্রমাণ করা দুঃসাধ্য হবে।” দেবনাথবাবু জানান, আজ, সোমবার পুলিশের আবেদনের বিরোধিতা করে তিনি মামলায় ৩০৪ ধারা যুক্ত করার জন্য আবেদন জানাবেন। পুলিশ অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
গত বুধবার ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানা এলাকায় চাহিদামতো সিগারেট না-পেয়ে দোকানদারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল স্কুল পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। খাবার দোকানটির মালিক প্রদীপ মাহাতোকে মার খেতে দেখে বাঁচাতে ছুটে এসেছিলেন তাঁর কাকা বিমল মাহাতো। রেহাই পাননি বিমলবাবুও। টেবিলের ভাঙা পায়া দিয়ে বিমলবাবুকে বেধড়ক মারা হয় বলে অভিযোগ। দু’দিনের মাথায় শুক্রবার এসএসকেএমে মৃত্যু হয় প্রহৃত বিমলবাবুর। বুধবার ঘটনার পরেই দশজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিমলবাবুর ভাইপো প্রদীপ মাহাতো। তিন অভিযুক্তকে পুলিশ বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে আদালতে তোলে। তিন জনেই জামিন পেয়ে যায়। শুক্রবার আরও ছয় অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করে করে।