পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ

খরচ নিয়ে বিরোধে স্থগিত স্থায়ী সমিতির বৈঠক

জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ নিয়ে সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতির সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা শাসকের বিরোধের জেরে ভেস্তে গেল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠক। মঙ্গলবার এই বৈঠক মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা মানছেন সভাধিপতি তথা অর্থ স্থায়ী সমিতির চেয়ারম্যান মধুরিমা মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ নিয়ে সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতির সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা শাসকের বিরোধের জেরে ভেস্তে গেল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠক। মঙ্গলবার এই বৈঠক মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা মানছেন সভাধিপতি তথা অর্থ স্থায়ী সমিতির চেয়ারম্যান মধুরিমা মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, “জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতিতে আমরা যে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে চাইছি অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) তাতে বাধা দিচ্ছেন। এ দিন অর্থ স্থায়ী সমিতি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার সময় মতবিরোধ হওয়ায় বৈঠক স্থগিত রাখা হয়েছে। এ নিয়ে দলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

এ দিন দুপুরে জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সভাধিপতি মধুরিমাদেবী, সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান, জেলা পরিষদের অধিকাংশ কর্মাধ্যক্ষ ও জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন)অজয়বাবু উপস্থিত ছিলেন। অর্থ স্থায়ী সমিতির গত বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলি পর্যালোচনা করতে আলোচনা শুরু হয়। জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত জেলাশাসক সভায় জানান, সম্প্রতি জেলাপরিষদের গত আর্থিক বছরের বিভিন্ন খাতে টাকা খরচের অডিট হয়েছে। ওই অডিটে জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের অর্থ যে ভাবে খরচ করা হয়েছে তা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত বলে পরামর্শ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।

নিয়ম অনুযায়ী জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের টাকার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ উন্নয়নের কাজে খরচ করতে হবে। বাকি টাকা জেলা পরিষদের নিজস্ব খরচ-সহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক খাতে ব্যয় করা যাবে। কিন্তু ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের (২ কোটি টাকার বেশি) মাত্র ২৪ শতাংশ টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকার মধ্যে সাড়ে ১৭ শতাংশ খরচ হয়েছে জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের গাড়ি ভাড়া, তেল খরচ বাবদ। এ ছাড়া জেলা পরিষদের বিভিন্ন সভা, বৈঠকের টিফিন খরচ, বিভিন্ন ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা ও কর্মী-দুঃস্থদের চিকিত্‌সার জন্য সাহায্য বাবদ খরচ করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই এ দিন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের অর্থ খরচ নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন। তখনই সহ-সভাধিপতি অভিযোগ তোলেন, অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অতিরিক্ত জেলাশাসকের বাধায় তা কার্যকর হচ্ছে না। জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন শাখার দুই ইঞ্জিনিয়ারের পারিবারিক সদস্যকে চিকিত্‌সার জন্য এক লক্ষ টাকা সাহায্য অর্থ স্থায়ী সমিতির চেয়ারম্যানের সম্মতি না নিয়েই অতিরিক্ত জেলাশাসক দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়। পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন জেলা পরিষদের অধীন সব্জি বাজার লিজের আর্থিক অঙ্ক নির্ধারণ নিয়েও অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে সহ-সভাধিপতি সুফিয়ানের মতবিরোধ বাধে বলে জানা গিয়েছে। সুফিয়ানের অভিযোগ, “জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতির সদস্য হিসেবে আমরা যে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তা কার্যকর করতে চান না অতিরিক্ত জেলাশাসক। এর ফলে জেলা পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।”

Advertisement

এ দিন অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠক শুরুর পরপরই মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে। তার জেরে মাত্র আধ ঘণ্টা পরেই সভাধিপতি বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করেন। মূল আলোচ্য বিষয়গুলি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তর আগেই বৈঠক বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে জেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে এখনও পড়ে থাকা অর্থ খরচের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে বলে জেলা পরিষদের আধিকারিকদের অভিমত। এতে জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। পদাধিকার বলে জেলা পরিষদের নির্বাহী আধিকারিক হলেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। তিনি অবশ্য বলেন, “এ দিনের বৈঠকে ছিলাম না। তবে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক খুব ভাল। আলোচনাতেই সমস্যা মিটে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন