পথ দেখাচ্ছে ওড়িশা

খরচ বাঁচাতে নদীতে এ বার রবার ড্যাম

কংক্রিট নয়, নদীর গতিপথে এ বার ‘রবার ড্যাম’ তৈরির পথে এগোচ্ছে রাজ্য। জলাধার তৈরির জন্য কেন এই উদ্যোগ? প্রশাসন সূত্রে খবর, এর কারণ প্রধাণত দু’টি। প্রথমত, এই ধরনের বাঁধ তৈরির খরচ কম। দ্বিতীয়ত, এই বাঁধ এলাকাবাসী প্রয়োজনে ছোট-বড় করতে পারবেন। বেশি জল জমে বন্যার আশঙ্কা থাকলে তা নীচু করে দেবেন। আবার গরমে উঁচু করে সেচের জন্য অতিরিক্ত জল রাখতে পারবেন।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩২
Share:

কংক্রিট নয়, নদীর গতিপথে এ বার ‘রবার ড্যাম’ তৈরির পথে এগোচ্ছে রাজ্য।

Advertisement

জলাধার তৈরির জন্য কেন এই উদ্যোগ? প্রশাসন সূত্রে খবর, এর কারণ প্রধাণত দু’টি। প্রথমত, এই ধরনের বাঁধ তৈরির খরচ কম। দ্বিতীয়ত, এই বাঁধ এলাকাবাসী প্রয়োজনে ছোট-বড় করতে পারবেন। বেশি জল জমে বন্যার আশঙ্কা থাকলে তা নীচু করে দেবেন। আবার গরমে উঁচু করে সেচের জন্য অতিরিক্ত জল রাখতে পারবেন।

পাশের রাজ্য ওড়িশায় ইতিমধ্যেই ‘রবার ড্যা’ম তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি জল সম্পদ উন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা ওড়িশার ওই বাঁধ পরিদর্শন করে এসেছেন। সেখানে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চ’ ও ওড়িশা সরকারের ‘ডিরেক্টরেট অব ওয়াটার ম্যানেজমেন্টে’র আধিকারিকেরাও ছিলেন। তাঁরা ওই বিশেষ ধরনের বাঁধ তৈরি করেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এ রাজ্যের আধিকারিকেরা। পরীক্ষামূলক ভাবে রাজ্যের প্রথম ‘রবার ড্যাম’ তৈরি হবে পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইচণ্ডী খালের উপরে। সেই প্রস্তাবও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জল সম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘কম খরচে সাধারণ মানুষকে সেচের সুবিধে দিতেই এই পদক্ষেপ।’’ ওড়িশায় গিয়েছিলেন দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মলয় ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা সব দিক খতিয়ে দেখেছি, কংক্রিট ড্যামের থেকে রবার ড্যাম অনেক বেশি উপযোগী। তাই কলাইচণ্ডী খালের উপর পরীক্ষামূলক ভাবে এই ড্যাম তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি।’’

Advertisement

রবার ড্যাম এক ধরনের চেক ড্যাম। আগে চেক ড্যাম তৈরি হত কংক্রিটের। এই পদ্ধতিতে নদীর গতিপথ রোধ করে জলাধার তৈরি করা হয়। যাতে রবি মরসুমে সেচের সমস্যা না হয়। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকাগুলিতে এ ভাবেই সেচের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা হলে নির্দিষ্ট মাপের নীচে নামানো বা ওঠানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে আবার স্লুইস গেট তৈরির প্রয়োজন হয়। নতুবা পুরো জলই আটকে থাকবে। নীচু এলাকার মানুষ জলই পাবেন না। কিন্তু রবার ড্যামের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। ধরা যাক, কোনও একটি এলাকায় ৫ মিটার উচু রবার ড্যাম তৈরি করা হল। তা উঁচু করার জন্য রবারের ভেতর জল ঢোকানো প্রয়োজন। পাম্প দিয়ে জল ঢুকিয়ে উচ্চতা ৫ মিটার করা হবে। রয়েছে জল নিষ্কাশনের সুবিধাও। জল বের করে প্রয়োজন মতো ২ বা ৩ মিটার উঁচু করা যাবে ড্যাম। বর্ষার সময় পুরো জল বের করে নদীর গতিপথ স্বাভাবিক অবস্থায় এনে বন্যা নিয়ন্ত্রণও করা যাবে। কিন্তু এই বাঁধ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মলয় ঘোষের জবাব, ‘‘৫ মিটার দূর থেকে গুলি করে দেখা হয়েছে যে ওই বিশেষ ধরনের রবারকে ফুটো করা যায়নি। সহজে কাটাও যাবে না।’’ এতে খরচ কত কম হবে? এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘কংক্রিটের চেক ড্যাম করতে যেখানে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয় সেটা রবার ড্যামের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকায় হয়ে যাবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কম খরচে এই ধরনের ড্যাম তৈরিতে সাফল্য মিললে রাজ্যের সর্বত্রই এই ধরনের ড্যাম তৈরি করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন