গল্প-গানের পাশাপাশিই চলত পড়া, বলছে কৃতীরা

প্রিয় বিষয় অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পরেই বাবা-মাকে জানিয়েছিল এক নম্বর কম পাব। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বের হতে দেখা গেল, সত্যি অঙ্কে এক নম্বর কমই। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে সে। আর এই ফলে খুশি তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের ছাত্র প্রত্যয় চন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০০:৩৯
Share:

তমলুকে তোলা নিজস্ব চিত্র।

প্রিয় বিষয় অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পরেই বাবা-মাকে জানিয়েছিল এক নম্বর কম পাব। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বের হতে দেখা গেল, সত্যি অঙ্কে এক নম্বর কমই। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে সে। আর এই ফলে খুশি তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের ছাত্র প্রত্যয় চন্দ্র।

Advertisement

তমলুক শহরের পদুমবসান এলাকার বাসিন্দা প্রত্যয়ের বাবা-কাকা-জেঠু মিলিয়ে পাঁচ ভাইয়ের যৌথ পরিবার। বাবা তাপস চন্দ্র পারিবারিক ব্যবসা করেন। আর মা কল্যাণী চন্দ্র স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। বাবা-মার একমাত্র সন্তান প্রত্যয় পঞ্চম শ্রেণি থেকেই হ্যামিল্টন স্কুলের ছাত্র। অষ্টম শ্রেণি থেকে ক্লাসে প্রথম স্থান দখল করত সে। এবার মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ৬৪৪ নম্বর পেয়েছিল প্রত্যয়। আর বাজিমাত করল মাধ্যমিকে। ৬৭৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে প্রত্যয়। তার প্রাপ্ত নম্বর, বাংলায় ৯৪, ইংরাজিতে ৯৪, অঙ্কে ৯৯, ভৌতবিজ্ঞানে ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯৭ ও ভূগোলে ৯৬।

সাত জন গৃহশিক্ষক ছাড়াও মা কল্যাণীদেবী নিজে তাঁকে পড়াতেন নিয়ম করে। ছেলের সাফল্যে স্ত্রীর অবদানের কথা স্বীকার করে তাপসবাবু বলেন, “মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার পরে অধিকাংশ গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া বন্ধ করে দিলেও মায়ের কাছে পড়াশোনা করেছে প্রত্যয়। আজ ওর এই ফলের জন্য ও মায়ের অবদান অনেকটাই।” তবে শুধু পড়াশোনা নয়, এর পাশাপাশি পাড়ার ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, ক্রিকেট খেলা, ক্যারাম খেলার নেশা প্রত্যয়ের। আর সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা গল্প, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের গুণমুগ্ধ ভক্ত প্রত্যয়। টিভিতে কার্টুন, সিনেমা দেখে অবসর সময় কাটে।

Advertisement

এত ভাল ফলের পর কী বলছে প্রত্যয়? তার উত্তর, “ভাল ফল হবে আশা করেছিলাম। তবে মেধা তালিকায় স্থান পাব ভাবিনি। আপাতত বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়তে চাই।” প্রিয় বিষয় অঙ্ক হলেও ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় সে।

ছোট্ট পড়ার ঘরে বইয়ের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে হারমোনিয়াম আর তবলা। পড়ার মাঝে মাঝেই চলত গলা সাধাও। তবু পড়ায় যে কোনও ফাঁক ছিল না তা প্রমাণিত হয়ে গেল বৃহস্পতিবার। মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মেধা তালিকায় ষষ্ঠ হয়েছে তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের ছাত্র গোপালচন্দ্র সাঁতরা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৭।

তমলুক শহরের টাউন শঙ্করআড়ার বাসিন্দা গোপালের বাবা সুকুমার সাঁতরা পেশায় জীববিজ্ঞানের শিক্ষক। মা আল্পনা সাঁতরা গৃহবধূ। বাবা-মার একমাত্র সন্তান গোপাল বাবার কাছে জীববিজ্ঞান পড়ত। তবে এছাড়াও ইংরাজি, অঙ্ক, ফিজিক্স, ইতিহাস, ভূগোলের জন্যও গৃহশিক্ষক ছিল তার। মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষায় ৬২০ নম্বর পাওয়ায় চ্যালেঞ্জ ছিল মাধ্যমিকে আরও ভাল নম্বর পাওয়ার। ফল জানার পর খুশি গোপাল। তার প্রাপ্ত নম্বর, বাংলায় ৯০, ইংরাজিতে ৯৬, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৭ ও ভূগোলে ৯৬।

অনুকূল ঠাকুরের ভক্ত গোপাল নিরামিষাশী। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা-সহ নানা গোয়েন্দা গল্পের পাঠক গোপালের অবসর কাটে টিভিতে কার্টুন দেখে, গানবাজনার চর্চা করে। ছেলের সাফল্যে খুশি সুকুমারবাবু বলেন, “এই ফলে আমরা সকলেই খুশি।” স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর প্রথম সারিতে থাকা গোপালের কথায়, “ভাল ফলের আশা করেছিলাম। তবে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ায় খুব খুশি হয়েছি।” বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হতে চায় গোপাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন