গড় অটুট, বার্তা পেয়ে সবং ছাড়লেন মানস

সকাল সওয়া দশটা। দুধ-সাদা গাড়িটা পৌঁছল ভিকনি নিশ্চিন্তপুরে। গাড়ি থেকে দেশের বাড়িতে নামার সময় বেশ উত্তেজিত মানস ভুঁইয়া। “নীলটের বুথটা ওরা (তৃণমূল) দখল করে নিয়েছে। আমাদের পোলিং এজেন্ট বলাই জানাকে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে” গজগজ করতে করতেই পা চালালেন বাড়ির সামনে থাকা প্রয়াত বাবা-মায়ের মূর্তির দিকে। করজোড়ে করে প্রণাম করলেন। তারপর স্ত্রী গীতাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলেন বুথের দিকে।

Advertisement

বরুণ দে

সবং শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০২:৩০
Share:

সবংয়ের নিশ্চিন্তিপুরে ভোট দিচ্ছেন সস্ত্রীক কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল সওয়া দশটা। দুধ-সাদা গাড়িটা পৌঁছল ভিকনি নিশ্চিন্তপুরে। গাড়ি থেকে দেশের বাড়িতে নামার সময় বেশ উত্তেজিত মানস ভুঁইয়া। “নীলটের বুথটা ওরা (তৃণমূল) দখল করে নিয়েছে। আমাদের পোলিং এজেন্ট বলাই জানাকে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে” গজগজ করতে করতেই পা চালালেন বাড়ির সামনে থাকা প্রয়াত বাবা-মায়ের মূর্তির দিকে। করজোড়ে করে প্রণাম করলেন। তারপর স্ত্রী গীতাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলেন বুথের দিকে।

Advertisement

সোমবার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮২.৬৭ শতাংশ। ভিকনি নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ভোটার সংখ্যা ৭৫৯। মানসবাবুও এখানকারই ভোটার। তিনি যখন পৌঁছলেন, তখন ৩০৩ জনের ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। শুনে আশ্বস্ত হলেন মানসবাবু। ভোট দেওয়ার পর ভোটকর্মীদের কাছে জানতে চাইলেন, “সব ঠিকঠাক চলছে? কোনও সমস্যা নেই তো।”

সোমবার সকালে ডেবরা থেকেই সবংয়ে আসেন। রাতে সে ভাবে ঘুম হয়নি। মানসবাবুর নিজের কথায়, “সব জায়গার খোঁজখবর নিতে হচ্ছিল। রাতে ঘুমটা আর হল না।” ডেবরা থেকে সবংয়ে আসার পথে বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নেন। তখনই বিকাশ ভুঁইয়া, অমল পণ্ডার মতো কংগ্রেস নেতারা তাঁকে জানান, সবংয়ের পরিস্থিতি মোটের উপর ঠিকই আছে। দু’-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নে ভোট হচ্ছে। মানসবাবুর ভাই বিকাশবাবু জেলা কংগ্রেস সভাপতি। অমলবাবু সবং ব্লক কংগ্রেস সভাপতি। সবং পঞ্চায়েত সমিতিরও সভাপতি। অন্যত্র যাই হোক না কেন, তাঁর ‘গড়’ যে অটুট থাকছে, সম্ভবত তখনই তা বুঝে গিয়েছিলেন ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী। না হলে ভোট দিয়ে বেরোনোর পর তিনি কী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সবংয়ের তেমাথানিতে এসে মানস ভুঁইয়ার জামানত জব্দের ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই মাটিতেই মানস ভুঁইয়ার জামানত জব্দ করুন। মানস ভুঁইয়াকে ধরে ঢুকিয়ে দেবেন এখানে। দেখা যাক!” মানসবাবুর কথায়, “কেশপুরে ভোট লুঠ করা হচ্ছে। গড়বেতা-শালবনি থেকে গুন্ডাদের আনা হয়েছে। নীলটে আমাদের বুথ এজেন্টকে বার করে তৃণমূলের একটি ছেলে বোতাম টিপে যাচ্ছে। আমি ওই বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।” এরপরই সবং ছাড়েন মানসবাবু। যান পিংলা, ডেবরা, কেশপুর, ঘাটাল সহ অন্যত্র। দিনভর তাঁর ‘গড়’ আঁকড়ে থাকেন বিকাশবাবু, অমলবাবুরা।

Advertisement

গেল পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের সর্বত্র বিরোধীদের ভরাডুবি হয়েছে। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৮টিই দখল করেছে তৃণমূল। ব্যতিক্রম, এই সবং। সবং পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, এ বারও এখানে তাঁদের লড়াই বামেদের সঙ্গে। তৃণমূল ফ্যাক্টর নয়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃতীয় স্থানে থাকবে। সোমবার দুপুরে ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়ে বসে ভোট পরিস্থিতির তদারকি করছিলেন অমল পণ্ডা, জয়ন্তপ্রকাশ ভৌমিকরা। শিক্ষক নেতা তথা জেলা কংগ্রেসের সহ- সভাপতি জয়ন্তবাবুর কথায়, “সবংয়ের মাটিটাই কংগ্রেসের মাটি। এখানকার মানুষকে সহজে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রভাবিত করা যায় না। সবং কংগ্রেসেরই থাকবে।” অমলবাবুর মোবাইলটা বেজেই চলেছে। খবর আসে, ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মার্কণ্ডচকে দলের এক কর্মী প্রহৃত হয়েছেন। হরেকৃষ্ণ বর্মণ নামে ওই কর্মীকে মারধর করেছে তৃণমূলের লোকেরা। উত্তেজিত অমলবাবু ফোনে ধরেন এক পুলিশ অফিসারকে, “কী হচ্ছে কী? এ ভাবেই চলবে তো?” পরে বলছিলেন, “ঠিকঠাক ভোট হলে আমরা ১ লক্ষ ২৫- ৩০ হাজার ভোট পেতে পারি।”

ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পেয়েছিল পাঁচটি। বামেরা দু’টি। জোটের পাঁচটির মধ্যে একটি এই সবং। বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এই লোকসভায় বামেরা পিছিয়ে ২৭ হাজার ভোটে। আর গেল পঞ্চায়েত নির্বাচনে একক ভাবে লড়াই করে তৃণমূল বামেদের থেকে এগিয়ে ৩৭ হাজার ভোটে। সবং থেকে কী লিড মিলবে? সদুত্তর এড়িয়ে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “ওখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আমরা এ বার ভাল ফলই করব।” অমলবাবু বলছিলেন, “তৃণমূল নিন্মচাপের মতো। এখান থেকে হটছে। অন্যত্রও হটে যাবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন