জৈব চাষে পথ দেখাচ্ছে লালগড়

কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন লালগড়ের অড়মা গ্রামের ঊর্মিলা হেমব্রম, আশা সরেন, নমিতা হেমব্রমরা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য ওই আদিবাসী মহিলাদের মিলিত প্রচেষ্টায় অড়মায় ‘জৈব গ্রাম প্রকল্প’ গড়ে উঠেছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বিঘাপ্রতি যে খরচ হত, এখন জৈব পদ্ধতির চাষে সেই খরচ কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০০:২০
Share:

লালগড়ে জৈব সার তৈরির প্রকল্প পরিদশর্ন করছেন নির্মল ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন লালগড়ের অড়মা গ্রামের ঊর্মিলা হেমব্রম, আশা সরেন, নমিতা হেমব্রমরা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য ওই আদিবাসী মহিলাদের মিলিত প্রচেষ্টায় অড়মায় ‘জৈব গ্রাম প্রকল্প’ গড়ে উঠেছে।

Advertisement

তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বিঘাপ্রতি যে খরচ হত, এখন জৈব পদ্ধতির চাষে সেই খরচ কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। প্রতি ডেসিমেল পিছু গড়ে ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত লাভও পাওয়া যাচ্ছে। লালগড় ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা রণজিৎ পোদ্দার জানান, জৈব গ্রাম প্রকল্পের উদ্দেশ্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং চাষের খরচ কমানো। তিনি বলেন, “এই দুটি ক্ষেত্রেই আমরা সফল হয়েছি। অড়মা গ্রামের ৫৫টি পরিবারের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন বাড়িতেই ভারমি কমপোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি করছেন। এই সার ব্যবহারে ধান ও সব্জি গাছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।”

জঙ্গলমহলে কৃষকদের কেঁচো সার ব্যবহারের মাধ্যমে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে বছরখানেক আগে উদ্যোগী হয় কৃষি দফতর। এ জন্য লালগড়ের রামগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের অড়মা গ্রামে ‘জৈব গ্রাম প্রকল্প’টি গড়ে তোলা হয়েছে। অড়মা গ্রামের ৫৫টি পরিবার নিজেদের বাড়িতে জৈব সার ও জৈব পদ্ধতিতে কীটনাশক তৈরি করছেন। কৃষি দফতরের দাবি, ধান ও সব্জি চাষে ওই সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তিতে এই জৈব চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অন্য গ্রামের চাষিরাও।

Advertisement

অড়মার বাসিন্দারা গোবর, গোমূত্র, নিমপাতা ও আরও কিছু জৈব জিনিস পচিয়ে জৈব কীটনাশক তৈরি করছেন। অড়মার জৈব গ্রাম প্রকল্পটি দেখে অন্য গ্রামের বাসিন্দারাও উৎসাহিত হচ্ছেন। লালগড়ের রামগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের বেনাগেড়িয়া এবং সিজুয়া পঞ্চায়েতের বাঁধগোড়া ও সীতারামডিহির মতো গ্রামগুলিতেও জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় আদিবাসীরা। বেনাগেড়িয়া গ্রামে ‘কমিউনিটি ভারমি কমপোস্ট পিট’ তৈরি হয়েছে। বেনাগেড়িয়ার পতিত জমিতে ‘এগ্রিকালচারাল টেকনোলজিস্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ প্রকল্পে (আতমা) জৈব সার ব্যবহার করে বৃষ্টিনির্ভর করলা-সহ বিভিন্ন সব্জি চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

গত বছরে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার আওতায় অড়মা গ্রামের ৫৫টি পরিবারকে জৈব গ্রাম প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি জৈব সার ও জৈব কীটনাশক তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ অড়মা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। নির্মলবাবু জানান, কৃষি দফতরের উদ্যোগে ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহযোগিতায় অড়মা গ্রামে ওই প্রকল্পটি রূপায়িত হয়েছে। এক বছরে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে অড়মার বাসিন্দারা লাভের মুখ দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। জঙ্গলমহলের অন্য গ্রামের চাষিদের জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে উৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, “জঙ্গলমহলের লালগড় ও বেলপাহাড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর ফলে গ্রামেই জৈব সার ও জৈব কীটনাশক তৈরি করতে পারবেন স্থানীয়েরা।”

জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের দাবি, “জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল ও সব্জি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও ঝুঁকিহীন। বিষয়টি অড়মার চাষিদের হাতেকলমে বোঝানো সম্ভব হয়েছে। গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই এই কাজ করছেন। ফলে বাসিন্দাদের সারা বছরের খাদ্যনির্ভরতা অনেকটাই মিটেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন