মুচলেকা দিচ্ছেন আইনজীবীরা

জেলা আদালতে কোর্ট ফি-র আকাল

কোর্ট ফি-র আকাল। অগত্যা আইনজীবীদের মুচলেকা দিতে হচ্ছে! আদালতের কাছে লিখিত ভাবে জানাতে হচ্ছে, কোর্ট ফি মিললে তাঁরা তা জমা দিয়ে দেবেন। আপাতত যেন আবেদন গ্রাহ্য হয়। মেদিনীপুর জেলা আদালতের এই সমস্যা সমাধানের আর্জি নিয়ে দিন কয়েক আগে জেলা ও দায়রা বিচারক রাই চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিল আইনজীবী সংগঠন। বিচারক ইতিমধ্যে সমস্যার বিষয়টি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার নজরে এনেছেন। জেলাশাসক বলেন, “বিষয়টি দেখছি। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করা হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১৫
Share:

কোর্ট ফি-র আকাল। অগত্যা আইনজীবীদের মুচলেকা দিতে হচ্ছে! আদালতের কাছে লিখিত ভাবে জানাতে হচ্ছে, কোর্ট ফি মিললে তাঁরা তা জমা দিয়ে দেবেন। আপাতত যেন আবেদন গ্রাহ্য হয়। মেদিনীপুর জেলা আদালতের এই সমস্যা সমাধানের আর্জি নিয়ে দিন কয়েক আগে জেলা ও দায়রা বিচারক রাই চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিল আইনজীবী সংগঠন। বিচারক ইতিমধ্যে সমস্যার বিষয়টি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার নজরে এনেছেন। জেলাশাসক বলেন, “বিষয়টি দেখছি। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করা হবে।”

Advertisement

সপ্তাহ দুয়েক ধরে কোর্ট ফি-র আকাল চলছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে ৫ টাকা এবং ১০ টাকার কোর্ট ফি মিলছেই না। অথচ, ১০ টাকার কোর্ট ফি-ই বেশি প্রয়োজন হয়। তাছাড়া, কোর্ট ফি না মিললে আইনজীবীরা যেমন সমস্যায় পড়েন, তেমনই সরকারেরও রাজস্বের ক্ষতি হয়। জানা গিয়েছে, এর ফলে জেলা আদালত থেকে দিনে গড়ে ১২-১৫ হাজার টাকায় রাজস্বে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আইনজীবী শান্তি দত্তের কথায়, “বেশ কিছু দিন ধরে কোর্ট ফি-র আকাল চলছে। ৫ টাকা, ১০ টাকার কোর্ট ফি না মেলায় আমাদের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আদালতের কাছে মুচলেকা দিতে হচ্ছে।” সুর চড়িয়ে আরেক আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, “সত্যিই কোর্ট ফি-র আকাল চলছে, না কি এক বা একাধিক দুষ্টচক্র ইচ্ছাকৃত ভাবে এই সমস্যা তৈরি করছে, তা প্রশাসন খতিয়ে দেখুক। অনেক সময় বাড়তি দাম দিয়েও কোর্ট ফি নিতে হয়। উপায় থাকে না। কিছু কিছু জায়গায় ৫ টাকার কোর্ট ফি ৭ টাকা, ১০ টাকার কোর্ট ফি ১২ টাকায় বিক্রি হয়। আদালতে কোর্ট ফি-র আকাল চললে তো সরকারেরই রাজস্বের ক্ষতি হয়। তাহলে এই সমস্যা সপ্তাহ দুয়েক ধরে চলবে কেন?” তীর্থঙ্করবাবু আরও মনে করিয়ে দেন, এই প্রথম নয়, আগেও দিনের পর দিন কোর্ট ফি পাওয়া যায়নি। আর এক আইনজীবী শক্তিপদ দাস অধিকারীর কথায়, “সমস্যার সমাধানে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা উচিত।”

মেদিনীপুরে দু’টি বার রয়েছে। এরই একটি ‘বার অ্যাসোসিয়েশন মেদিনীপুর’। সংগঠনের সম্পাদক দেবীদাস মহাপাত্র বলেন, “দিন কয়েক আগেই আমরা সমস্যার বিষয়টি জেলা ও দায়রা বিচারককে জানাই। উনি সমস্যার কথা জেলাশাসকের নজরেও এনেছেন। শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।”

Advertisement

আদালতে কোনও আবেদন করতে গেলেই কোর্ট ফি লাগে। সে কোনও মামলার সময় চেয়ে আবেদন করা হোক বা অন্য কোনও পিটিশন দাখিল করা হোক। ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকার কোর্ট ফি হয়। তবে, ১০ টাকার কোর্ট ফি-ই বেশি লাগে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ৫টি আদালত রয়েছে। এর মধ্যে মেদিনীপুরেরটি জেলা আদালত। ঝাড়গ্রাম এবং ঘাটালে রয়েছে মহকুমা আদালত। দাঁতন এবং গড়বেতায় রয়েছে চৌকি কোর্ট। খড়্গপুরে মহকুমা আদালত ভবন তৈরি হয়েছে। তবে, তা চালু হয়নি। সূত্রের খবর, মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ২৮টি এজলাস রয়েছে। যেখানে ঝাড়গ্রামে ৭টি, ঘাটালে ৫টি, দাঁতনে ২টি, গড়বেতায় ৩টি এজলাস রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে মেদিনীপুরে আসেন অসংখ্য মানুষ। কারও দেওয়ানি মামলা চলছে। কারও ফৌজদারি মামলা চলছে।

কোর্ট ফি পাওয়া যায় সরকার নিযুক্ত ভেন্ডারদের কাছ থেকে। ভেন্ডাররা ট্রেজারি থেকে কোর্ট ফি আনেন। এখন ট্রেজারিতে কোর্ট ফি-র আকাল চললে, স্বাভাবিক ভাবেই আদালতে কোর্ট ফি-র আকাল শুরু হয়। এখন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী হয়েছে বিচার বিভাগ। বেশি করে লোক আদালত বসছে। যে আদালতের মাধ্যমে কম সময়ে বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে। চালু হয়েছে ‘প্রি বার্গেনিং’-ও। যেখানে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে পাশাপাশি বসিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। মূলত, এ ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে জরিমানা দিয়েই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি মেলে অভিযুক্তের। বিচারকের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত তাঁর দোষ স্বীকার করেন। অভিযোগকারীও ক্ষতিপূরণ হিসেবে জরিমানা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সব মিটিয়ে নিতে সম্মত হন। এই পরিস্থিতিতে কেন মেদিনীপুরের মতো আদালতে কোর্ট ফি-র আকাল চলবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন