জলের দাবিতে বালতি, হাঁড়ি নিয়ে অবরোধ

পুরভোটের মুখেও সামনে আসছে রেলশহরের জলসঙ্কট। সোমবার খড়্গপুরের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দারা জলের দাবিতে পথ অবরোধ করেন। বালতি, হাঁড়ি নিয়ে খড়্গপুর-কেশিয়াড়ি সড়কে সকাল ন’টা থেকে চলে অবরোধ। নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৪
Share:

খড়্গপুরের রবীন্দ্রপল্লিতে অবরোধ স্থানীয় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটের মুখেও সামনে আসছে রেলশহরের জলসঙ্কট। সোমবার খড়্গপুরের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দারা জলের দাবিতে পথ অবরোধ করেন। বালতি, হাঁড়ি নিয়ে খড়্গপুর-কেশিয়াড়ি সড়কে সকাল ন’টা থেকে চলে অবরোধ। নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

রবীন্দ্রপল্লির একটি অংশে আগে গভীর নলকূপ বসিয়ে স্থানীয় ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে জল সরবরাহ করা হত। কয়েক মাস হল পাম্পের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওভারহেড থেকে সুষ্ঠু ভাবে জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। চাঁদমারির জলের ট্যাঙ্ক থেকে আসা অন্য একটি সংযোগেও পর্যাপ্ত জল মিলছে না ফলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আয়রন মিশ্রিত, সুতোর মতো জল পড়ছে। বৈধ সংযোগ থাকা সত্ত্বেও জল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মঙ্গলা সিংহ বলেন, “আমাদের বাড়িতে পাঁচ বছর হল টাইমকলের সংযোগ রয়েছে। আগে কম জল পেলেও এখন একেবারেই পাচ্ছি না।” স্থানীয় মিঠু দে, বীণাদেবীদের কথায়, “আমরা জলের জন্য কর দিচ্ছি। তা-ও এই হাল। শীতেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে গরমে কী হবে?”

সমস্যার কথা মেনে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অপূর্ব ঘোষ বলেন, “কয়েকটি পরিবারের এই সমস্যা হচ্ছে। আসলে কোথাও পাইপে ফাটল, উঁচু-নীচু থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় এই অবরোধ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এই কাউন্সিলর। তাই দেবাশিস বিরোধী বলে পরিচিত পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের অনুগামীরা এই অবরোধের পিছনে রয়েছে বলে তিনি ইঙ্গিত করছেন। যদিও জহরবাবু বলেন, “ওই এলাকার জলের সমস্যা বাস্তব। তাই স্থানীয় মানুষ অবরোধ করেছেন।” আর পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডের বক্তব্য, “আমার কাছে আগে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। মৌখিকভাবে স্থানীয় কাউন্সিলর একবার জানিয়েছিলেন।” পুরপ্রধানের যুক্তি, চাহিদা বাড়ায় কিছু ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জল না মিললেও প্রতিটি বাড়িতেই জল পড়ছে। সেই সঙ্গে রবিশঙ্করবাবুরও বক্তব্য, “এই অবরোধের পিছনেও শাসকদলের একটি গোষ্ঠী রয়েছে।”

Advertisement

খড়্গপুরে জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ১৯৯৯ সালে জলপ্রকল্পের পরে জলের চাহিদা কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বছর-বছর সংযোগ বাড়ায় জলের চাহিদা বেড়েছে। কিছু ওয়ার্ডে ছোট গভীর নলকূপ বসিয়ে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা চালালেও সুরাহা হয়নি। শহরের বিদ্যাসাগরপুর, নিউটাউন, খরিদা, তালবাগিচা, রবীন্দ্রপল্লি, সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, মালঞ্চ-সহ বিভিন্ন জলের তীব্র সঙ্কট রয়েছে।

২০১০ সালে পুরসভার ক্ষমতায় এসে তৃণমূল নতুন জলপ্রকল্পের পরিকল্পনা করেছিল। বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৮৬ কোটি টাকা। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ অগস্ট অনাস্থা ভোটে জিতে কংগ্রেস পুরসভা দখলের পর থেকেই ওই জলপ্রকল্প গতি হারিয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। যদিও কংগ্রেসের দাবি, আগের তৃণমূল বোর্ড ওই জল প্রকল্প অপরিকল্পিতভাবে করেছিল। জলের উৎস সন্ধান না করেই পাইপ বসিয়েছিল। কংগ্রেস পুরপ্রধানের আশ্বাস, “শহরে এখন যে পরিমাণ জলের ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে গরমেও মানুষ জল পাবেন। আশা করছি এ বছরই জলপ্রকল্পের কাজ শেষ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন