জলসঙ্কট ঠেকাতে তৎপর মেদিনীপুর পুরসভা

প্রতি বারই স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে পানীয় জলের চাহিদাও। আর পানীয় জলের যোগান দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পুরসভাকে। এই পরিস্থিতিতে পুর-কর্তৃপক্ষও পড়েছেন চাপে। যে এলাকাগুলিতে তীব্র জল সঙ্কট ছিল সেখানে দু’টি গভীর নলকূপও বসানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও যে শহরে পানীয় জলের সঙ্কট পুরোপুরি মেটানো সম্ভব নয় তা সকলেরই জানা।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০১:০২
Share:

প্রতি বারই স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে পানীয় জলের চাহিদাও। আর পানীয় জলের যোগান দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পুরসভাকে। এই পরিস্থিতিতে পুর-কর্তৃপক্ষও পড়েছেন চাপে। যে এলাকাগুলিতে তীব্র জল সঙ্কট ছিল সেখানে দু’টি গভীর নলকূপও বসানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও যে শহরে পানীয় জলের সঙ্কট পুরোপুরি মেটানো সম্ভব নয় তা সকলেরই জানা। এবার সেই সমস্যা মেটাতে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভার জল বিভাগ। তা দিয়ে যাতে এই আপৎকালীন পরিস্থিতির কিছুটা সুরাহা করা যায়। তারই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে শহর জলসঙ্কটে না পড়ে সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করা হয়েছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। জল বিভাগের পুর-পারিষদ মৌ রায় বলেন, “গ্রীষ্মকালে কিছুটা জলসঙ্কট দেখা দেয়। তবে তা যাতে তীব্র আকার ধার না করে, সে জন্য আমরা পদক্ষেপ করেছি।”

Advertisement

পুরসভায় যে সাধারণভাবে দু’একটি গভীর নলকূপ বসিয়ে জল সঙ্কট মেটানো সম্ভব নয়, একথা সকলেই জানেন। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, পুর এলাকায় দিনে গড়ে ২৪.৫০ মিলিয়ন লিটার জলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পুরসভা জল সরবরাহ করতে পারে মাত্র ১৮.২ মিলিয়ন লিটার। অর্থাৎ চারভাগের তিনভাগ জল সরবরাহ করতে সক্ষম পুরসভা। বাকি ক্ষেত্রে অবশ্য কিছু মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে গভীর নলকূপ বসিয়েছেন। ফলে তাঁরা পুরসভার জল সরবরাহের উপর নির্ভরশীল নন। আবার উল্টো দিকে তেমন জল অপচয়ের ঘটনাও ঘটে। সব সময় নিয়ম মেনে পাম্প চালানো হয় বা জলাধার ভর্তি করা হয়, এমনও নয়। সেদিকেও গাফিলতি থাকে বলে অভিযোগ। এই বিষয়গুলি অবশ্য পুরসভার জল বিভাগের দায়িত্বে থাকা পুর-পারিষদের নজরেও আসে। তিনি বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ করে পাম্প হাউসে বা জলাধারে হানাও দিয়েছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরেও দেখেছেন। তা করতে গিয়ে জল অপচয় ও নিয়মিত পাম্প না চালানোর চিত্রটি তাঁরও নজরে এসেছে। তারপর তিনি এ ব্যাপারে সক্রিয় পদক্ষেপও গ্রহন করেছেন। পাম্প চালানোর কর্মী ও জলাধারের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা যাতে ফাঁকি দিতে না পারে, জলাধার ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত যাতে পাম্প চালানো হয়, সে ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে সমন্বয় রাখতে দেওয়া হয়েছে মোবাইল। পুর-পারিষদ জানান, “জলাধার ভর্তি হওয়ার পরেই পাম্প হাউসের কর্মীকে মোবাইলে সেই বার্তা দিয়ে দেবেন। তারপরই পাম্প বন্ধ করা হবে। এমনিতেই গ্রীষ্মে জলের সঙ্কট দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে জলাধার ভর্তি হওয়ার আগে পাম্প বন্ধ হলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন। যাতে তা না হয় তাই মোবাইল দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু এক্ষেত্রেও যে ফাঁকি দেবেন না, তা কে বলতে পারে? পুর-পারিষদ বলেন, “এ জন্য নিয়ম করে কর্মীদের পাম্প ও জলাধার পরিদর্শনেও জোর দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও হঠাৎ হঠাৎ দেখতে চলে যায়। কাজে গাফিলতি দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছি।”

এ তো গেল জলাধার ভর্তি। কিন্তু অপচয় বন্ধে কী ব্যবস্থা? পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মূলত, কল খোলা থাকার কারনেই জল অপচয় হয় বেশি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা জাগাতে হবে। যদিও বর্তমানে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কল চুরি হয়ে যায়। ফলে ক্রমাগত জল পড়তেই থাকে। তাই এবার ট্যাপগুলিকে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনভাবে বাঁধানো হচ্ছে যাতে সহজে কেউ কল চুরি করতে না পারে। শুধু তা বন্ধ করা ও খোলা যায়। ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। পুর-পারিষদের কথায়, “জল অপচয় বন্ধ করা গেলে জলসঙ্কট অনেকটাই মিটবে।”

Advertisement

মেদিনীপুর শহরের একাধিক এলাকায় এখনও জলের সঙ্কট রয়েছে। গোয়ালাপাড়া, অরবিন্দনগর, হবিবপুর, নতুনপল্লি, সূর্যনগর, চাষিপাড়া, নবীনপল্লী, উত্তর বিবেকানন্দ নগর সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ তীব্র জল সঙ্কটে ভুগছেন। সম্প্রতি অরবিন্দনগর ও হবিবপুর এলাকায় দু’টি গভীর নলকূপ বসানোও হয়েছে। কিন্তু অবিলম্বে ন্যুনতম আরও ১০টি নলকূপ না বসালে যে পানীয় জলের সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলবে না, তা পুর কর্তৃপক্ষেরও অজানা নয়। পুর-পারিষদের কথায়, “আমরা ১০টি গভীর নলকূপ বসাীনোর অনুমোদনও পেয়েছি। শীঘ্রই তার টাকাও পেয়ে যাবে বলে আশা। টাকা পেলেই নলকূপগুলি বসিয়ে দেওয়া হবে।” ভবিষ্যতে শহরকে জলসঙ্কট থেকে মুক্ত করতেও নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগও গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন