ঠাঁই বদলালেও খোশমেজাজেই দেবাশিসের বাদল

তার মালিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্য মঞ্চে চড় মেরে গণপিটুনির জেরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর তার ঠাঁই হয়েছে এলাকারই এক পশুপ্রেমীর ভিটেতে। তবে পেটুয়াঘাট থানা এলাকার বামুনিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের ছোটবানতলিয়া গ্রামে ভালোই দিন কাটছে চড় কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবাশিস আচার্যের ঘোড়া বাদলের। এই ক’দিনের মধ্যে ঠাঁই বদল ছাড়াও আরও একটা বদল ঘটে গিয়েছে বাদলের জীবনে।

Advertisement

সুব্রত গুহ

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

নতুন ঠিকানায়। ছোটবানতলিয়ায় সোহম গুহ-র তোলা ছবি।

তার মালিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্য মঞ্চে চড় মেরে গণপিটুনির জেরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর তার ঠাঁই হয়েছে এলাকারই এক পশুপ্রেমীর ভিটেতে। তবে পেটুয়াঘাট থানা এলাকার বামুনিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের ছোটবানতলিয়া গ্রামে ভালোই দিন কাটছে চড় কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবাশিস আচার্যের ঘোড়া বাদলের। এই ক’দিনের মধ্যে ঠাঁই বদল ছাড়াও আরও একটা বদল ঘটে গিয়েছে বাদলের জীবনে। দেবাশিসের দেওয়া নাম বদলে হয়ে গিয়েছে ‘দেবী’।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবাশিস আঠিলাগড়ির থানাপুকুরপাড়ের যে বাড়িতে ভাড়া ছিলেন তার মালিক তমালপল্লব বিশ্বাসও মালিকের অবর্তমানে ঘোড়াটিকে রাখতে চাইছিলেন না। এমন দুবির্সহ অবস্থা দেখে ঘোড়াটিকে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন বামুনিয়া পঞ্চায়েতের ছোটবানতলিয়া গ্রামের পশুপ্রেমী সমর প্রধান। ঘোড়াটিকে সমরবাবুর হাতে তুলে দেওয়ার আগে তমালবাবু অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ঘোড়ার মালিক দেবাশিস বা তাঁর পরিজনরা চাইলে ফেরত দিতে হবে ঘোড়াটি। তাতেও রাজি হয়ে গিয়েছেন সমরবাবু।

তমালবাবু জানান, গত ৯ নভেম্বর দেবাশিস তার আঠিলাগড়ির থানাপুকুরপাড়ের বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে আসেন দেবাশিস। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি খেজুরির বাঁশগোড়া থেকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়াটি কিনে আনেন। প্রথমে নিজে দেখাশোনা করলেও পরে পরে সুখেন দাস নামে এক ছাত্রকে ঘোড়াটিকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘোড়াটি মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তাকে বাদল বলে ডাকতেন দেবাশিস। এরপরই অভিষেককে চড় মারায় অভিযুক্ত ও তৃণমূলের দলীয় কর্মীদের মারে জখম হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হন দেবাশিস। সেই সময় পুলিশ তদন্তে এসে দেবাশিসের বাড়ির জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করলেও ঘোড়াটিকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে। সেই থেকেই ঠিকমতো যত্ন হচ্ছিল না ঘোড়াটির। এরপর সমরবাবু ঘোড়াটি নিতে রাজি হন।

Advertisement

নিজের দায়িত্বে কেন ঘোড়াটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলেন?

প্রশ্নের জবাবে পেশায় দিঘার হোটেলকর্মী সমরবাবু জানান, একদিন রাস্তায় দেখলাম, একটি ঘোড়াকে ধরতে অনেকে ছুটছেন। আবার তাকে ধরতে না পেরে অনেকে আঘাতও করছে তাকে। তখনই তিনি ঘোড়াটিকে নিজের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ঘোড়ার যত্ন নিতে নিতে তিনি জানান, ঘোড়াটিকে প্রতিদিন ছোলা, ভুষি, খড় খাওয়ানো হয়। তাঁর কথায়, “আমি সামান্য হোটেল কর্মী। সঙ্গতি হয়তো নেই। তবু এতদিন একটা গরু আর বিলিতি কুকুর পুষেছি। এ বার ঘোড়া। ওর নাম দিয়েছি দেবী।” সঙ্গে তিনি জানান, ঠিকমতোই খাওয়া দাওয়া করছে তাঁর দেবী।

দেবাশিসের বাড়ির লোকজন ঘোড়া নিতে এলে কী করবেন?

মাথা নামিয়ে সমরবাবুর উত্তর, “ঘোড়া ফেরত দিতে আমি বাধ্য। কিন্তু কষ্ট হবে, এই আর কি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন