তৃণমূলের দ্বন্দ্ব আগামী দিনে হাতাহাতির পর্যায়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন এক তৃণমূল নেতাই। দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে দলেরই একাংশ নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিলেন তিনি।
শনিবার তৃণমূলের জেলা কমিটির বর্ধিত সভা ছিল মেদিনীপুরে। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমাদের মিলেমিশে চলবার অভাব আছে। অভাব আছে বলেই দুর্বলতাগুলো প্রকট হচ্ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন কী ভাবে? ওরা তো ধর্মকে নিয়ে আসছে। ধর্মের প্রতি আমার-আপনার বিশ্বাস আছে। লড়াই করা তখনই সম্ভব যদি দলে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়। সেই জায়গায় ঘাটতি আছে।”
গোষ্ঠী কোন্দল নিয়েও এ দিন মুখ খোলেন দেবাশিসবাবু। তাঁর স্বীকারোক্তি, “আমার শহরে গোষ্ঠী আছে। এখনও পর্যন্ত হাতাহাতির পর্যায়ে যায়নি। ভবিষ্যতে যে যাবে না কী করে বলব! ভবিষ্যতে ডাকলে আমি এখানে আসব তারও নিশ্চয়তা নেই।” রেলশহরে তৃণমূলের শহর সভাপতির আরও ক্ষোভ, ৩ বছর ৮ মাস হল দল ক্ষমতায় রয়েছে। অথচ এখনও তাঁদের নিজেদের কথা বলা হয়নি। দলে তাঁদের অবস্থান এখনও জানা হয়নি। দেবাশিসবাবুর কথায়, “নেত্রীর পক্ষে তো সম্ভব নয় প্রতিটা কর্মীরা সামনে এসে বলা, ‘তোমার প্রতি আমার নজর এবং খেয়াল রয়েছে।’ এখনও পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি তৈরি হয়নি। আর কতদিন আমরা অপেক্ষা করব?”
রেলশহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কারও অজনা নয়। একদিকে রয়েছে দেবাশিসবাবুর অনুগামীরা। অন্য দিকে, প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের অনুগামীরা। দলের অন্দরে চাপে থাকা দরুনই এ দিন তিনি দলের সভায় এই সব মন্তব্য করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। দেবাশিসবাবু যখন এ সব কথা বলছেন, তখন মঞ্চে ছিলেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতি, দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। দেবাশিসবাবু বলেন, “কোনও ব্যক্তি আমার শত্রু নয়। তবে আমার মনে হচ্ছে, দলটা দীনেনদা, প্রদ্যোৎদা কেন্দ্রীয় হয়ে যাচ্ছে।”
প্রশাসনের সঙ্গে দলের সমন্বয়ের অভাব আছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, “আপনার অঞ্চলে কি চাষি ধানের দামটা পাচ্ছেন? বুকে হাত দিয়ে বলুন। না হলে না বলুন।” তাঁর কথায়, “চালকল মালিকেরা দালালি করছে, ফঁড়েরা সক্রিয় হচ্ছে। আমাদের ভূমিকা কী হবে? জেলাশাসক নেই? খাদ্য দফতর নেই? আমাদের কিছু লোকের জন্য সিপিএম ধান নিয়ে রাস্তায় নেবে অবরোধ করবে? আর কাগজে বড় বড় ছবি বেরোবে? আর যুক্তি দেওয়া হবে, কিছু বলা যাবে না। বলতে গেলে চালকল বন্ধ হয়ে যাবে। যারা কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে, তারা কাউকে টাকা দিচ্ছে।” দেবাশিসবাবুর মতে, এ সবের বিরুদ্ধে মুখ না খুললে, চাষির পাশে না দাঁড়ালে শুধু বুথ সম্মেলন, অঞ্চল সম্মেলন দিয়ে জন-সমর্থন ধরে রাখা যাবে না। তাঁর কথায়, “দিদির কথা কার্যকর করতে হলে আগে মানুষের কথা মানুষের সামনে বলতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “এখনও শ্রমিক সংগঠন হিসেবে জেলায় সিটু আমাদের থেকে শক্তিশালী। এআইটিইউসি আমাদের থেকে শক্তিশালী। বিএমএস আসছে। শ্রমিকের স্বার্থে ওরা একসঙ্গে বৈঠকও করে। কেউ কেউ কাউকে ধরে আমাদের মধ্যে ঢুকে আমাদের বিষিয়ে দিচ্ছে। নষ্ট করে দিচ্ছে।”
দেবাশিসবাবুর এমন বক্তব্যে সভায় আলোড়ন পড়ে। জেলা নেতারা কেউই সরাসরি কিছু বলেননি। তবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “প্রত্যেককে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে, আমি আমার কাজটা ঠিক করে করছি কি না। আমি যদি নিজে ঠিক কাজ না করি, তাহলে অন্য জায়গায় ঠিক কাজ করতে পারব না।”