হিজলি জেল থেকে আইআইটি

তথ্যচিত্রে বন্দিদের ভূমিকায় আইআইটির শিক্ষক-ছাত্রেরা

পরাধীন ভারতে যা ছিল বন্দিনিবাস, আজ সেখানেই দাঁড়িয়ে ভারতের প্রযুক্তিবিদ্যার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান আইআইটি। গৌরবময় এই প্রতিষ্ঠানের বিবর্তনের টুকরো-টুকরো নানা কথা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশ করল খড়্গপুর আইআইটি। সোমবার খড়্গপুর আইআইটি-র প্রতিষ্ঠা দিবসে অনুষ্ঠিত হল তার ‘প্রিমিয়ার শো’। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর হিজলি বন্দিনিবাসের শহিদ দিবস অনুষ্ঠানে তা সাধারণ দর্শকদের জন্য আইআইটির নেহরু মিউজিয়ামে চালানো হবে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচি

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০১:২৬
Share:

চলছে তথ্যচিত্র প্রদর্শন। নিজস্ব চিত্র।

পরাধীন ভারতে যা ছিল বন্দিনিবাস, আজ সেখানেই দাঁড়িয়ে ভারতের প্রযুক্তিবিদ্যার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান আইআইটি। গৌরবময় এই প্রতিষ্ঠানের বিবর্তনের টুকরো-টুকরো নানা কথা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশ করল খড়্গপুর আইআইটি। সোমবার খড়্গপুর আইআইটি-র প্রতিষ্ঠা দিবসে অনুষ্ঠিত হল তার ‘প্রিমিয়ার শো’। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর হিজলি বন্দিনিবাসের শহিদ দিবস অনুষ্ঠানে তা সাধারণ দর্শকদের জন্য আইআইটির নেহরু মিউজিয়ামে চালানো হবে।

Advertisement

‘হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প টু আইআইটি: অ্যান আনটোল্ড সাগা’ শীর্ষক এই তথ্যচিত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাধীনতার ইতিহাস মিলেমিশে গিয়েছে। আইআইটির ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ শাসিত ভারতের প্রস্তাবিত হিজলি জেলার সদর দফতর হওয়ার কথা ছিল অধুনা খড়্গপুর আইআইটির চত্ত্বরেই। ১৯০৬ সালের সেই ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ঠিক হয়, আট বিঘা জমিতে আট লক্ষ টাকা ব্যয়ে তা তৈরি হবে। পরে ভবনও তৈরি হলেও নানা জটিলতায় চালু হয়নি। পরে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু বন্দিনিবাস গড়ার পরিকল্পনা নেয়। তখন প্রস্তাবিত হিজলি জেলার সদর দফতরটি হয়ে যায় হিজলি সংশোধনাগার ও বন্দিনিবাস।

কথিত আছে, এই জেলেই বন্দি ছিলেন সুহাসিনী গঙ্গোপাধ্যায়, সরোজ আভা নাগ, বনলতা দশগুপ্ত, ইন্দুমতি ঘোষদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। তখন জেলটি ছিল উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। সেই বন্দিজীবনের কাহিনী ফুটিয়ে তুলতে অভিনয় করেছেন প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া, অধ্যাপক, কর্মী-সহ ৯০ জন। আইআইটির বায়ো-টেকনোলজি বিভাগের ছাত্রী দুর্গাপুরের দীপাশা সিংহের কথায়, “আমি আইআইটিতে তিন বছর পড়ছি। কিন্তু এর সঙ্গে যে এত ইতিহাস জড়িয়ে ছিল জানতাম না।” খড়্গপুরেই বড় হওয়া প্রতিষ্ঠানের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া কৌশিক আগুয়ান আবার বলছেন, “কিছুটা জানতাম। কিন্তু অভিনয় সূত্রে আরও অনেকটা জেনেছি।”

Advertisement

এ দিন নেতাজি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনী জমে উঠেছিল দাদু ও নাতনির কথোপকথনের মধ্য দিয়ে। তথ্যচিত্রটির পরিচালক মুম্বইয়ের অল্টার ইগো ফিল্মের পিনাকী সরকার বলেন, “তথ্যচিত্র তৈরিতে চার মাস সময় লেগেছে।” তথ্যচিত্রটি ইংরেজি, বাংলা ও হিন্দি তিনটি ভাষাতেই রয়েছে। দাদুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টলিউডের অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায় আর নাতনির ভূমিকায় দেবাসৃতা চৌধুরী।

তথ্যচিত্র তৈরিতে ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেহেরু মিউজিয়ামের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অর্ণব হাজরা। তিনি জানান, ভারত সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের টাকায় ও আইআইটির নেহরু মিউজিয়ামের প্রযোজনায় তথ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে।

এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিলেন, আইআইটির প্রাক্তনী ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রদীপ খোসলা, প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী প্রমুখ। এ দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। ছবি দেখে বেরিয়ে দেবারতি চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার চিকিৎসক-ছাত্রী কিরণ বৈদ্যরা বলছিলেন, “তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আইআইটিকে নতুন করে চিনলাম।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement